• ৩১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১লা শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

লন্ডনে হোটেল কোয়ারেন্টিনে থাকা মুসলিম পরিবারকে শুকরের মাংশ দিয়ে ইফতার,বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি পরিবারের কোর্টে মামলা

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত এপ্রিল ২২, ২০২১
লন্ডনে হোটেল কোয়ারেন্টিনে থাকা মুসলিম পরিবারকে শুকরের মাংশ দিয়ে ইফতার,বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি পরিবারের কোর্টে মামলা

বিবিএন নিউজ ডেস্ক: দেশ থেকে ফেরার পরে হোটেল কোয়ারেন্টিনে অস্বাস্থ্যকর ও আবদ্ধ পরিবেশে রাখার জন্য বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি দুটি পরিবার ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এই দুটি মুসলমান পরিবারকে ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী যথাযথ খাবার দাবার না দেয়া, হোটেলে অপরিস্কার বিছানায় শোতে বাধ্য করা এবং মুক্ত বাতাস থেকে বঞ্চিত রাখা তাদের প্রতি সম্ভাব্য মানবাধিকার লঙ্গনের সামিল এমন অভিযোগ এনেছেন তাদের আইনজীবি।

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি বাংলাদেশ ও পাকিস্তান লাল তালিকাভুক্ত হয়েছে এবং এসব দেশ থেকে যারা ব্রিটেনে আসবেন তাদেরকে বাধ্যতামুলকভাবে করোনা ভাইরাস টেষ্ট সহ হোটেল কোয়ারান্টিনে থাকার নিয়ম চালু করা হয়েছে। গত সোমবার লাল তালিকাভূক্ত করা হয়েছে ভারতকে। ২৪ এপ্রিল থেকে ভারতীয় নাগরিকদেরও ঢুকতে দেয়া হবে না। তাই, ২৪ এপ্রিলর আগেই ভারত থেকে ব্রিটেনে ফিরতে বিশেষ ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ নিলেও অনুমতি দেয়নি হিথরো এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ। এটা নিয়ে চলছে দেন-দরবার।

নিয়ম অনুযায়ি ব্রিটিশ নাগরিক ও যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাসরত বিদেশি নাগরিকদেরকে এদেশের ঢোকার পর সরকার অনুমোদিত হোটেলে নিজ খরচে ১০ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়। এজন্যে তাদের হাজার পাউন্ড ব্যয় করতে হয়।

বুধবার ডেইলি ইন্ডিপেন্ডেন্টের এক এক্সক্লুসিভ রিপোর্টে বলা হয়, কোয়ারেন্টিনের জন্য নির্ধারিত একটি হোটেলে নিম্ন মানের সেবা এবং খাবারের পানির জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা, অনুপযুক্ত খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। একটি পরিবার চারদিনের মধ্যে দুই বার হাইকোর্টে গেলে হিথরো এয়ারপোর্টের নিকটবর্তী হলিডে ইন হোটেলকে পরিস্থিতির উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হলেও তা অবজ্ঞা করা হয়েছে।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারী থেকে যুক্তরাজ্যে বাইরে থেকে আসা যাত্রীদের জন্যকরোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে নিয়ম করা হয়েছে যে, যারা লাল তালিকাভুক্ত দেশ থেকে আসবেন তাদের ১০ দিন কোয়ারেন্টিন তালিকভুক্ত হোটেলে থাকতে হবে। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির জন্য এবাবদ ১৭৫০ পাউন্ড ভাড়া দিতে হবে। যদি তার সাথে আরেকজন থাকেন অথবা ১২ উর্ধ ছেলেমেয়ে থাকে তাহলে অতিরিক্ত ৬৫০ পাউন্ড পরিশোধ করতে হবে। ১২ বছরের নিচের বয়সি শিশু থাকলে অতিরিক্ত ৩২৫ পাউন্ড ভাড়া দিতে হবে। এরমধ্যে কিছু হোটেল বাসিন্দা তাদের সাথে ‘মানুষের মতো ব্যবহার করা হচ্ছেনা’ বলে অভিযোগ করেছেন। তাদের আইনজীবিরা বলছেন এমন আচরণ অনেতিক ও নিন্দনীয় এবং অবশ্যই বে আইনি। বিশেষ করে কোয়ারেন্টিন হোটেলে যে ভাড়া পরিশোধ করছেন তাকে তারা চাঁদাবাজির সাথে তুলনা করেছেন।

একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে হলিডে ইন এক্সপ্রেসে পাঁচ জনের একটি পরিবার ১০দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকার জন্য উঠেন। তাদেরকে পাশাপাশি সংযুক্ত দুটি রুম দেয়া হয় যা একদম আবদ্ধ। রুমে একটি চেয়ার ও একটি টেবিল রয়েছে। কোর্টে দেয়া তাদের অভিযোগে জানা গেছে সেখানে রুমের জানালা খোলার কোন ব্যবস্থা নেই বাইরে ময়লা নেয়ারও কোন ব্যবস্থা নেই যা একটি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। ব্রিটিশ পাকিস্তানি এই পরিবার হোটেলের জন্য ৪০২৫ পাউন্ড পরিশোধ করেছে। তারা অভিযোগ করে তাদেরকে বেকন এবং পর্ক এর বাগার্র খেতে দেয়া হয়েছে। কোয়ারেন্টিন থেকে বের হওয়ার আগের দিন নাহিদা খান (৪৭) নামের এই মহিলা বলেন, এটি ছিল একটি দু:স্বপ্নের মতো। খাবার ছিল খুবই খারাপ, অরুচিকর, যা সম্পুর্ণ খাবারের অযোগ্য। পর্ক বাগার্র এবং পানিনি দেয়া হয় যা মুসলমান হিসাবে তারা খেতে পারেন না। তিনি জানান তাদের সন্তানেরা শুধু সেরিয়েল ও ক্রিস্প খেয়েছে।

নাহিদা খান বলেন, “যেহেতু আমাদের একটি চেয়ার ছিল তাই বিছানায় বসে খাবার খেতে হয়েছে এবং তা নোংরা হয়ে যায়। তিন চার দিন পর তাদের পরিস্কার বেডশিট নিয়ে আসার জন্য বলা হয়েছে এবং বাধ্য হয়েই আমরা নোংরা বেডশিটে শুতে হয়েছে। আমার কিছু করার ছিলনা।”

তারা বাইরে ব্যায়ামের জন্য যেতেও পারছিলেন না, জানালা খোলা যায়না এবং একেবারে বন্দীর মতোই ছিলেন। তারা জানালা দিয়ে শুধু লবি দেখতে পেতেন। হোটেলে পৌছার পরে তাদের জানানো হয়েছিল, তারা কারপার্কে ব্যায়ামের জন্য হাঁটতে পারবেন। তাদের সাথে মানুষের মতো ব্যবহার করা হয়নি অভিযোগ করে বলেন, তাদের সন্তানেরা শুধ কেঁদেই সময় কাটিয়েছে।

পরিবারের আইনজীবি হাইকোর্টে মামলা করলে শুক্রবার কোর্ট সরকারকে নির্দেশ দেয় সোমবারের ভিতরে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণের। বিচারক লেইং নির্দেশ দেন “তারা সত্যিকারভাবে কোয়ারেন্টিনে অসুবিধা ভোগ করছেন, বিশেষ করে তাদের শিশুদের স্বাস্থ্য ও ভাল থাকার বিষয় নিয়ে। এবং মুসলমান হিসাবে তাদের খাবার দাবারের ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে নজর দেয়া অত্যন্ত জরুরী।সূত্র: সাপ্তাহিক জনমত