বিবিএন নিউজ ডেস্ক: নারায়ণগঞ্জ শহরের কয়লাঘাটে শীতলক্ষ্যায় একটি লাইটার জাহাজের ধাক্কায় সাবিত আল হাসান নামে ডুবে যাওয়া যাত্রীবাহী লঞ্চের ৩৪ যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) সকাল ১০টা পর্যন্ত তাদের মরদেহ উদ্ধার হয়। এরমধ্যে রোববার রাতে ৫ নারী, সোমবার সকালে এক শিশু, দুপুরে ডুবন্ত লঞ্চের ভেতর থেকে ২০ জন এবং সন্ধ্যায় দুই শিশুসহ ৩ জন ও মঙ্গলবার সকালে ৫জন।এরমধ্যে ৩ শিশুসহ পুরুষ ১৬জন ও ৪ শিশুসহ নারী ১৮ জন।
নিহতরা হলেন, মুন্সিগঞ্জে কোর্টগাও এলাকার মুন্সীগঞ্জের উত্তর চর মসুরার পখিনা (৪৫), একই এলাকার বিথী (১৮) ও তার এক বছর বয়সী মেয়ে আরিফা, দোলা বেগম (৩৪), মুন্সীগঞ্জ সদরের রুনা আক্তার (২৪), মুন্সীগঞ্জের মোল্লাকান্দির সোলেমান বেপারী (৬০) ও তার স্ত্রী বেবী বেগম (৫৫), মুন্সীগঞ্জের মালপাড়ার সুনিতা সাহা (৪০) তার ছেলে বিকাশ (২২) ও আকাশ সাহা (১২), মুন্সীগঞ্জ সদরের প্রতিমা শর্মা (৫৩), মুন্সীগঞ্জের মোল্লাকান্দি চর কিশোরগঞ্জের মোঃ শামসুদ্দিন (৯০) ও তার স্ত্রী রেহেনা বেগম (৬৫), বরিশালের উটরা উজিরপুরের হাফিজুর রহমান (২৪), তার স্ত্রী তাহমিনা (২০) এবং এক বছর বয়সী শিশুপুত্র আবদুল্লাহ, মুন্সীগঞ্জের দক্ষিণ কেওয়ারের নারায়ন দাস (৬৫) ও তার স্ত্রী পার্বতী দাস (৪৫), নারায়ণগঞ্জের বন্দরের কল্যান্দী এলাকার আজমির (২) (ঘটনার সময় সে দাদা সাইফুল ইসলামের সঙ্গে ছিলো, দাদা সাইফুল বেঁচে গেছেন), মুন্সীগঞ্জ সদরের শাহ আলম মৃধা (৫৫), একই এলাকার মহারানী (৩৭), ঢাকার শনির আখড়া এলাকার আনোয়ার হোসেন (৪৫), তার স্ত্রী মাকসুদা বেগম (৩০) ও তাদের ৭ মাস বয়সী মেয়ে মানসুরা, মুন্সীগঞ্জ সদরের ছাউদা আক্তার লতা (১৮), শরিয়তপুরের নড়িয়ার আবদুল খালেক (৭০), ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ার মোছাঃ জিবু (১৩), মুন্সীগঞ্জের খাদিজা বেগম (৫০), নারায়ণগঞ্জের বন্দরের দক্ষিন সাবদির নুরু মিয়ার ছেলে মোঃ নয়ন (১৯) ও সাদিয়া (১১), মুন্সিগঞ্জের মধ্য কোন্ডাগাও এলাকার মতিউর রহমান কাজীর পুত্র ইউসুফ কাজী, ঢাকা মিরপুর-১১ এর বাসিন্দা সিরাজুল ইসলামের পুত্র মো. সোহাগ হাওলাদার (২৩), মুন্সিগঞ্জ সদরের দক্ষিণ ইসলামপুরের নুরুল আমিনের ছেলে তানভীর হোসেন হৃদয় (১৬), মালপাড়া এলাকার সিরাজের পুত্র রিজভী (২০)।
সদর উপজেলার ই্উএনও নাহিদা বারিক জানিয়েছেন, ৩৪ জনের লাশ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
রোববার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় লঞ্চ টার্মিনাল থেকে যাত্রী নিয়ে মুন্সীগঞ্জে যাচ্ছিল লঞ্চটি। মাত্র ১৫ মিনিটের মাথায় সোয়া ৬টার দিকে অপর একটি লাইটার জাহাজের ধাক্কায় ডুবে যায় লঞ্চটি। এসময় লঞ্চের দোতলা ও ছাদে থাকা যাত্রীদের একটি অংশ সাতরিয়ে তীরে উঠতে পারলেও নিচতলার যাত্রীরা পানিতে তলিয়ে যায়।
তদন্ত কমিটির ঘটনাস্থল পরিদর্শন
নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যায় মালবাহী জাহাজের ধাক্কায় ‘সাবিত আল হাসান’ নামে মুন্সিগঞ্জগামী একটি লঞ্চ যাত্রীসহ ডুবে ৩৪ জন নিহতের যাওয়ার ঘটনায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের গঠিত ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি মঙ্গলবার ৬ এপ্রিল সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। আগামী ৮ এপ্রিল সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে শুনানী করবে তদন্ত কমিটি।
জানা গেছে, শীতলক্ষ্যায় মালবাহী জাহাজের ধাক্কায় ‘সাবিত আল হাসান’ নামে মুন্সিগঞ্জগামী একটি লঞ্চ যাত্রীসহ ডুবে যাওয়ার ঘটনায় ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। কমিটি আগামী সাত দিনের মধ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পেশ করতে বলা হয়েছে।
কমিটির আহ্বায়ক নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব আবদুছ ছাত্তার শেখ। কমিটিতে সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) পরিচালক (নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক) মো. রফিকুল ইসলাম।
কমিটির সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন- নৌপরিবহন অধিদফতরের চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন জসিম উদ্দিন সরকার, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) প্রধান প্রকৌশলী, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি (অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নিচে নন), ফায়ার সার্ভিস অধিদফতরের একজন প্রতিনিধি এবং নৌপুলিশের একজন প্রতিনিধি।