বিবিএন নিউজ ডেস্ক: সিলেট নগরের একটি হোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকা অবস্থায় বিয়ে সেরে নিয়েছেন যুক্তরাজ্য ফেরত এক প্রবাসী। কোয়ারেন্টিনে থাকা হোটেলের হলরুমেই বিয়ের আয়োজন করা হয়। বিয়ের অনুষ্ঠানে হোটেলের বাইরে থেকে অর্ধশতাধিক অতিথি অংশ নেন। সিলেট নগরের বাসিন্দা কনে বিয়ের পর ওই হোটেলেই স্বামীর সঙ্গে অবস্থান করছেন।সিলেট নগরের একটি হোটেল থেকে কোয়ারেন্টিনে থাকা যুক্তরাজ্যফেরত ৯ জন উধাও হওয়ার ঘটনায় তোলপাড়ের মধ্যে এমন চাঞ্চল্যকর খবর পাওয়া গেছে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা এই বিয়ের আয়োজনের সত্যতাও পেয়েছে।২০ মার্চ বিয়ের এই আয়োজনটি হয় নগরের লামাবাজার এলাকার লা-ভিস্তা হোটেলে। নগরের বিভিন্ন বিপণিবিতান থেকে বিয়ের কোনাকাটাও করেন তারা।এর আগে ১৮ মার্চ যুক্তরাজ্য থেকে আসার পর ওই হোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয় বিয়ে করা প্রবাসী ও তার মাকে। যুক্তরাজ্য থেকে ফেরার দিনই হোটেলের ভেতরে তাদের আকদ অনুষ্ঠিত হয়। এতেও বাইরে থেকে অতিথিরা এসে অংশ নেন। হোটেল কর্তৃপক্ষের যোগসাজশেই এমনটি ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যদিও হোটেল কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করেছেন।সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্লাহ তাহের বলেন, লা-ভিস্তা হোটেলে কোয়ারেন্টিনে থাকা এক প্রবাসীর বিয়ের আয়োজনের সত্যতা পাওয়া গেছে। হোটেল মালিকও এটি স্বীকার করেছেন। কারা কারা এতে উপস্থিত ছিলেন, আয়োজনে কারা সহযোগিতা করেছেন এসব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এরপর দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।এর আগে ২১ মার্চ নগরের আম্বরখানা এলাকার হোটেল ব্রিটানিয়ায় কোয়ারেন্টিনে থাকা অবস্থায় উধাও হয়ে যান যুক্তরাজ্যফেরত একই পরিবারের ৯ সদস্য। পরে রাতে তাদের ফিরিয়ে আনা হয়। তারা রোগী দেখতে জকিগঞ্জ উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন বলে কর্তৃপক্ষকে জানান।এরপর ওই ৯ জনের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ৬ জনকে জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। আর ব্রিটানিয়া হোটেলের সঙ্গে প্রবাসীদের কোয়ারেন্টিনে রাখার চুক্তি বাতিল করে জেলা প্রশাসন।কোয়ারেন্টিনে থাকা অবস্থায় হোটেলেই প্রবাসীর বিয়ের ব্যাপারে একটি গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, ১৮ মার্চ যুক্তরাজ্য থেকে সিলেটে আসা যাত্রীদের মধ্যে ১১ জনকে হোটেল লা-ভিস্তায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। এদের মধ্যে দুজন সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার জাঙ্গাইল এলাকার এক নারী (৪৮) ও তার ছেলে আব্দুল মুহি উদ্দিন (২৮)। হোটেলের ৪০১ নম্বর কক্ষে মা ও ৪০৬ নম্বর কক্ষে ছেলে কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন।কোয়ারেন্টিনের নিয়ম অনুযায়ী তাদের বাইরে বের হওয়া ও বাইরের কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ করা নিষেধ। তবে এমন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঘটা করে বিয়ে করলেন মুহিউদ্দিন। এ বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেন বাইরে থেকে আসা প্রায় ৫০ জন অতিথি। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ভূরিভোজও হয় হোটেলের রেস্তোরাঁয়।গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ছেলের বিয়ে উপলক্ষে বাইরে বের হয়ে নগরীর বিভিন্ন বিপণিবিতান থেকে কেনাকাটাও করেছেন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকা প্রবাসী যুবকের মা। হোটেল কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে এমনটি হয়ে থাকলেও সঙ্গে আলাপকালে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হোটেল লা-ভিস্তার ব্যবস্থাপক তারেক আহমদ।তিনি বলেন, বিয়ের কোনো আনুষ্ঠানিকতা হয়নি। কেবল আকদ (বিবাহ রেজিস্ট্রি) হয়েছে। এতে কাজিসহ চার থেকে পাঁচজন মানুষ বাইরে থেকে এসে কেবল স্বাক্ষর নিয়েছেন। মানবিক দিক বিবেচনায় সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে।হোটেল ব্যবস্থাপক কেবল আকদ হয়েছে বলে জানালেও বিয়ের আয়োজনের ছবি এসেছে গণমাধ্যমে। পুলিশও বিয়ের আয়োজনের সত্যতা পেয়েছে।এ ব্যাপারে বিয়ে করা যুক্তরাজ্য প্রবাসী আব্দুল মুহিউদ্দিন ও তার মায়ের সাথে কথা বলতে চাইলেও হোটেল কর্তৃপক্ষ সে সুযোগ দেয়নি।সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আ.ন.ম. বদরুদ্দোজা বলেন, আমরা এসব বিষয়ে কঠোর হচ্ছি। কোয়ারেন্টিন যাতে সঠিকভাবে মেনে চলা হয় তা নজরদারি করা হবে। কিন্তু সব কিছুর ঊর্ধ্বে দরকার সচেতনতা। এ ক্ষেত্রে প্রবাসীদের সহযোগিতা করতে হবে। আর ব্রিটানিয়া হোটেলের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। লা-ভিস্তায় বিয়ের বিষয়ে অবগত হয়েছি। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।কোয়ারেন্টিন সঠিকভাবে পালন না করার জন্য হোটেল কর্তৃপক্ষও দায়ী উল্লেখ করে মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, পুলিশের কাজ হচ্ছে নিরাপত্তা দেয়া। হোটেল কর্তৃপক্ষ কোনো সমস্যা অনুভব করলে পুলিশকে জানাবে। কিন্তু তারা পুলিশের অগোচরে প্রবাসীদের বিয়ে করার ও বাইরে বের হওয়ার সুযোগ দিয়ে দোষ চাপায় পুলিশের উপর।যুক্তরাজ্যে নতুন ধরনের করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ জানুয়ারি থেকে যুক্তরাজ্য থেকে আসা যাত্রীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক করে সরকার। এ জন্য সিলেটের ১০টি হোটেলকে নির্বাচন করা হয়।১ জানুয়ারি থেকে যুক্তরাজ্য থেকে আসা যাত্রীরা প্রশাসনের সহযোগিতায় এসব হোটেলে কোয়ারেন্টিনে থাকছেন। বিমানবন্দর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারির মাধ্যমে তাদের হোটেলে এনে রাখা হয়। দেশে ইতিমধ্যে স্ট্রেইন আক্রান্ত রোগী শনাক্তও হয়েছে।(সূত্র:দি এডিটর )