আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সিনজিয়াংয়ে মুসলিম উইঘুরদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য চীনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সোমবার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, বৃটেন এবং কানাডা। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অধীনে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের সংগঠিত এমন উদ্যোগ এটাই প্রথম। তবে এমন শাস্তিমূলক ব্যবস্থার তাৎক্ষণিক জবাব দিয়েছে বেইজিং। তারাও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আইনপ্রণেতা, কূটনীতিক, প্রতিষ্ঠান এবং পরিবার। চীনের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এতে আরো বলা হয়েছে, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় চীনে মুসলিম উইঘুরদের গণহারে বন্দি করে রাখার কারণে বেইজিংয়ের জবাবদিহিতা চায় পশ্চিমা সরকারগুলো।
এক্ষেত্রে চীন গণহত্যা করছে বলে অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এসব অভিযোগকে প্রত্যাখ্যান করেছে চীন। চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক যে লড়াই করছে তার প্রাথমিক ফল হিসেবে দেখা হচ্ছে এই সমন্বিত উদ্যোগকে। যুক্তরাষ্ট্রের সিনিয়র কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা চীন সংক্রান্ত ইস্যুতে নিয়মিত প্রতিদিন ইউরোপের সরকারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। একে তারা ‘ইউরোপ রোডশো’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ব্রাসেলসে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও ন্যাটো মন্ত্রীদের বৈঠকের আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনিও ব্লিনকেন বলেছেন, আন্তর্জাতিক নিন্দা বৃদ্ধির মধ্যেও সিনজিয়াংয়ে গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ অব্যাহত রেখেছে চীন। কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, চীন কর্তৃপক্ষ যে ধারাবাহিকভাবে, রাষ্ট্রের নেতৃত্বে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে তার ভুরি ভুরি তথ্যপ্রমাণ রয়েছে।
অধিকারকর্মী এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলেন, সিনজিয়াংয়ের বন্দিশিবিরে আটকে রাখা হয়েছে কমপক্ষে ১০ লাখ মুসলিমকে। তারা এবং পশ্চিমা রাজনীতিকরা এক্ষেত্রে চীনের বিরুদ্ধে নির্যাতন, জোরপূর্বক শ্রমে বাধ্য করা এবং বন্ধ্যাকরণের অভিযোগ তুলেছেন। তবে জবাবে চীন দাবি করে, এসব শিবিরে উগ্রপন্থিদের ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই শিক্ষা দরকারি।
কিন্তু সোমবার প্রথমেই চীনের চারজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। ওই চার কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছেন চীনের নিরাপত্তা বিষয়ক একজন পরিচালকও। একই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করে বৃটেন ও কানাডা। যুক্তরাষ্ট্র যাদেরকে টার্গেট করে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তার মধ্যে রয়েছেন সিনজিয়াং পাবলিক সিকিউরিটি ব্যুরোর পরিচালক চেন মিঙ্গুও। এ ছাড়া ওই অঞ্চলের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা ওয়াং জুনঝেং আছেন এ তালিকায়। এমনিতেই গত বছর সিনজিয়াংয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা চেন কুয়াগুও’র বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট। তবে সোমবার পশ্চিমা মিত্ররা যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তাতে তার নাম উল্লেখ নেই। এক্ষেত্রে বৃহত্তর রাজনৈতিক বিরোধ এড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
ওদিকে কানাডা ও বৃটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সঙ্গে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। তাতে তারা বলেছেন, সিনজিয়াংয়ে বেইজিংয়ের নিষ্পেষণ বন্ধ করার দাবিতে তারা তিনজন ঐকবদ্ধ। ওই অঞ্চলে নির্যাতন ভয়াবহ। এর মধ্যে স্যাটেলাইটে ধারণ করা ছবি আছে, প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য আছে এবং চীন সরকারের নিজস্ব ডকুমেন্ট আছে। অন্যদিকে জাতিগত উইঘুর এবং সিনজিয়াংয়ে বসবাসরত মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিশ্বাসযোগ্য ক্রমবর্ধমান রিপোর্টে উদ্বেগ প্রকাশ করে আলাদাভাবে বিবৃতি দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। একই সঙ্গে তারা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, বৃটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের গৃহীত পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন।
(জনমত)