জহির অচিন পূরী: আমি তখন দক্ষিণ সুরমার জালালপুর স্কুলে পড়ি। থাকি মামার বাড়ি চর মোহাম্মদপুরে। সপ্তম শ্রেণি পাশ করে সবে অষ্টম শ্রেণিতে উঠেছি। নিজের বাড়িতে ছুটিতে এসেছি। আমাদের বাড়ী বেতসান্দি, বিশ্বনাথ থানার অলংকারী ইউনিয়নে। আমার বাবা প্রবাসী। বাড়ীতে আমার ছোট তিন ভাই ও ছোট দুই বোনকে নিয়ে আমার মা থাকেন। ক্ষেত কৃষি আমার মায়ের তত্বাবধানে হয়। আমার একমাত্র চাচা আব্দুল খালিক। তিনি ছাতক কলেজে অর্থনীতির অধ্যাপক। বাবা প্রবাসে যাওয়ার পূর্বে আমার চাচাকে আমাদের সংসারের প্রতি খেয়াল রাখার দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলেন। এ কারনে চাচা মাঝে মধ্যে গ্রামে আসতেন। এই ছুটিতে বাড়িতে এসে চাচাকে পেলাম। চাচা আমাকে বেশ কিছু প্রশ্ন করলেন, আমার ইংরেজি জ্ঞান যাচাই করার জন্য। আমি সন্তোষজনক উত্তর দিয়েছিলাম বলে প্রচন্ড আগ্রহী হয়ে চাচা আমাকে আরো ভালো পড়াশোনার জন্য ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরী স্কুলে ভর্তি করার পরিকল্পনা করলেন।
তিনি ছাতক যেয়ে সিমেন্ট ফ্যাক্টরী স্কুলের প্রধান শিক্ষক মরহুম ইসমাইল স্যার ও শিক্ষক মরহুম সৈয়দ মুরসালিন স্যার এর সাথে পরামর্শ করলেন। ফ্যাক্টরীর এমপ্লয়িদের সন্তান ছাড়া বাইরে থেকে ছাত্র ভর্তি করার সুযোগ খুবই সীমিত। আমার চাচা স্যারদের কনভিন্সড করতে পেরেছিলেন তাঁর ভাতিজা প্রচন্ড মেধাবী। স্কুল কর্তৃপক্ষ শুধু আমার জন্য একটি ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করেন। আমি চাচার মুখ রক্ষা করতে পেরেছিলাম। সানন্দেই স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাকে ভর্তি করে নিয়েছিলেন। আল্লাহর রহমতে পরবর্তীতে বিভিন্ন বোর্ড পরীক্ষায় স্কুলের সুনাম রাখতে পেরেছিলাম।
আমার চাচার কাছে মেধাবী বলতে প্রথম উদাহরণই ছিলাম আমি। আর আমার কাছে বড় অনুপ্রেরণা ছিলেন আমার চাচা।
দীর্ঘদেহী প্রচন্ড ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ ছিলেন আমার চাচা। দলমত নির্বিশেষে ছাতকের সকল এলিট লোকদের সাথে ছিলো উনার সুসম্পর্ক। বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশে ছাতক কলেজের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে তিনি বলিষ্ঠ ভুমিকা রেখেছেন। তিনি অনেক দক্ষতার সাথে ছাতক কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন।
আমার চাচা সিলেট শহরের কুয়ার পারে নিজ বাসায় অবসর জীবন যাপন করছিলেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি নিবিষ্টভাবে ধর্মীয় জীবন যাপনে অভ্যস্থ ছিলেন। আমার চাচাত ভাই #তারেক যুক্তরাজ্য প্রবাসী, দুই বোন, বড়জন যুক্তরাজ্য প্রবাসী, ছোটজন ডাঃ ফাহমিনা আক্তার বাপ্পি, গাইনীকোলজিস্ট, ওসমানী মেডিক্যাল কলেজে কর্মরত।
দীর্ঘকাল প্রস্টেট ক্যান্সারের জন্য চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গতকাল রাত আট ঘটিকায় তিনি আল্লাহ পাকের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৭৮ বৎসর। ইয়া মাওলা, তোমার মেহেরবানি, তুমি চাচাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান হিসেবে কবুল করো।
আজ বাদ জোহর হজরত শাহজালাল (রঃ) দরগাহ মসজিদে চাচার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে এবং মাজার সংলগ্ন গোরস্থানে দাফন সম্পন্ন হবে।
লেখক:চক্ষু বিশেষজ্ঞ। গীতিকার ও সুরকার।