সিলেট: নৃশংস, বর্বর, পৈচাশিক। সব সংজ্ঞাই যেনো ছাড়িয়ে গেছে সিলেটের ট্রিপল মার্ডারে।ক্ষোভ-ক্রোধ থাকলেও এমন নৃশংসতার বহিঃপ্রকাশ উপলব্ধিকেও হার মানায়। সিলেটে সৎ মা ও তার দুই শিশু এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।আর হত্যাকারী কোনো অপরিচিত লোক নয়। নিহতের সতীনের ছেলে আহবাব হোসেন আবাদ (১৭)ক্ষোভে-ক্রোধে তাদের উপর এমন নৃশংসতা চালায় সে। ময়নাতদন্ত করতে গিয়ে এমন নৃশংসতা দেখে ঘাবড়ে যান চিকিৎসক ও পুলিশ কর্মকর্তা।ঘাবড়ে যাবারই কথা। সৎ মা ও তার দুই সন্তানের দেহে ১৪৯ আঘাতের চিহ্ন মিলেছে ময়নাতদন্তে।
শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ মর্গে নিহত রুবিয়া বেগম (৩০), মেয়ে মাহা (৭) ও ছেলে তাহসানের (৪) ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. এন এম মিনহাজ উদ্দিন তিনটি মরদেহের ময়না করেন।
ময়নাতদন্তের বরাত দিয়ে মহানগরীর শাহপরান (র.) থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সারোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ময়নাতদন্তকালে নিহত রুবিয়ার দেহে ৭২টি আঘাতের চিহ্ন মিলে। এরমধ্যে গুরুতর জখম ২০টি, খন্তির আঘাতে দেহে ছিদ্র মিলেছে ২০টি এছাড়া হালকা আঘাত, ছিলা-আঁচড় জখমসহ মোট ৭২টি আঘাত রয়েছে। শিশু মাহার দেহে ৩৫টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ছোরা ও খন্তির গুরুতর জখম ১৫টি, বাকিগুলো ধারালো অস্ত্রের হালকা জখম। শিশু তাহসানের দেহে ৪২টি আঘাতের চিহ্নের মধ্যে নয়টি গুরুতর। বাকিগুলো ধারালো অস্ত্রের হালকা আঘাত।
তিনি বলেন, ময়নাতদন্তের পর নিহতদের মরদেহ নিহতের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে স্বজনরা মরদেহ তিনটি দাফনের জন্য নিহত রুবিয়ার বাবার বাড়ি সিলেটের গোয়াইঘাট উপজেলার ডৌবাড়ি ইউনিয়নের হাটগ্রামে নিয়ে যান।
বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাত ১২টার দিকে সিলেট সদর উপজেলার বিআইডিসি মীরমহল্লায় ভাড়া বাসায় সৎ মা রুবিয়া (৩০), মেয়ে মাহা (৭) ও ছেলে তাহসানকে কুপিয়ে হত্যা করে আহবাব হোসেন আবাদ। ঘটনার তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেও সে হত্যার ঘটনা স্বীকার করে। এ ঘটনায় শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে নিহতের ভাই আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে শাহপরান (র.) থানায় হত্যা ও প্ররোচনার দায়ে ৩০২ ও ১০৯ ধারায় মামলা (নং-১৮(২)২০২১) দায়ের করেন।
মামলায় নিহতের সৎ ছেলে আবাদ ছাড়াও হত্যার প্ররোচনার দায়ে তার মা সুলতানা বেগম রুমিকেও আসামি করা হয়েছে। শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় আবাদ। সিলেটে মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তৃতীয় আদালতের বিচারক শারমিন খানম নীলা ১৬৪ ধারায় তার জবানবন্দি রেকর্ড করে কারাগারে প্রেরণের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন।
নিহত রুবিয়া বেগম, শিশু মাহা ও তাহসান সিলেট শহরতলীর মীরমহল্লা এলাকার ভাড়াটে বাসিন্দা ব্যবসায়ী আবদাল হোসেন বুলবুলের স্ত্রী ও সন্তান। অন্যদিকে, হত্যা মামলায় গ্রেফতার আবাদ বুলবুলের প্রথম স্ত্রীর ঔরসজাত সন্তান।সুত্র বাংলা নিউজ