• ১২ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৮শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১২ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি

জিয়ার ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলের উদ্যোগে আওয়ামী লীগের লাভ লোকসান কতোটা

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২১
জিয়ার ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলের উদ্যোগে আওয়ামী লীগের লাভ লোকসান কতোটা
  • কাদির কল্লোল
  • বিবিসি বাংলা, ঢাকা

    বাংলাদেশে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা এবং মুক্তিযুদ্ধের একজন সেক্টর কমাণ্ডার জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিলের জন্য সরকারের একটি কমিটির সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

    এ ধরনের উদ্যোগের পেছনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তুলেছে বিএনপি।

    ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকে জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ কাউন্সিলের সুপারিশের পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরেছেন।

    তবে আওয়ামী লীগেরই বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে নানা আলোচনাও রয়েছে। বিষয়টি আওয়ামী লীগের জন্য রাজনৈতিক দিক থেকে ‘স্বস্তিকর’ নয় বলে দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অনেকে মনে করেন।

    কয়েকটি জেলায় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সাথে কথা বললে তারা জানিয়েছেন, তাদের মাঠ পর্যায়ে নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।তবে তারা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি নন।

    মাঠপর্যায়ের নেতাদের অনেকে আবার খেতাব বাতিলের সুপারিশ নিয়ে কোন বিতর্ককে আমলে নিতে রাজি নন।

    বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে আওয়ামী লীগের একজন নেত্রী জিনাত সোহানা চৌধুরী বলেছেন, বিএনপি এই বিতর্ক সৃষ্টি করছে এবং তাতে আওয়ামী লীগ বা সরকারের কোন ক্ষতি নেই বলে তিনি মনে করেন।

    “তর্ক-বিতর্ক রাজনীতিতে থাকবেই। মুল বিষয়টি হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের উনি রাষ্ট্রীয়ভাবে পুনর্বাসিত করেছেন। সবার কাছে এটা দিবালোকের মতো সত্য,” বলেন তিনি।

    তিনি আরও বলেছেন, “মুক্তিযুদ্ধে অবদান একটি বিষয়, আর আত্মস্বীকৃত খুনিদের প্রত্যক্ষভাবে মদদ দেয়া আরেকটা বিষয়। সেজন্য আমি তার খেতাব বাতিলের পক্ষে।”

    এদিকে, আওয়ামী লীগের সিনিয়র এবং প্রভাবশালী নেতাদেরও অনেককে এই ইস্যুতে বেশ সতর্ক বলে মনে হয়েছে।

    তারাও আনুষ্ঠানিকভাবে বা প্রকাশ্যে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

    তারা মনে করেন, যদিও জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের ব্যাপারে সরকার এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি, কিন্তু সরকারের একটি কমিটি যখন সুপারিশ করছে, তখন তা নিয়ে আওয়ামী লীগকেই রাজনৈতিক দিক থেকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে।

    তবে সরকারের জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ কাউন্সিল বা জামুকার যে বৈঠকে জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক তাতে সভাপতিত্ব করেছেন।মি: হকসহ আরও কয়েকজন নেতা এই সুপারিশ পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরেছেন।

    আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, “লাভ ক্ষতি বিবেচনা করে আওয়ামী লীগ কোন সত্য থেকে সরে যাবে, আওয়ামী লীগের এরকম কোন ইতিহাস নেই।”

    সুপারিশের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেছেন, “জামুকা এই সুপারিশ করেছে। সেখানে জামুকা কোন বেআইনী কাজ করেনি। এগুলো তো একেবারে রেকর্ডেড যে, সে স্বাধীনতা বিরোধীদের পুনর্বাসিত করেছে। এবং এখানে মিনি পাকিস্তান তৈরির সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। এটাতো ইতিহাস এবং তথ্যগতভাবে সত্য,” তিনি বলেন।

    বিএনপি নেতারা মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের অবদানের বিষয়কে তুলে ধরে এই সুপারিশের প্রতিবাদ করছেন।

    দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জামুকার বঠেকে সিদ্ধান্তের পর পরই প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, “বীর উত্তম খেতাব তিনি (জিয়াউর রহমান) পেয়েছিলেন, স্বাধীনতার পরে শেখ মুজিবুর রহমানের যে সরকার, সেই সরকারই তাকে খেতাব দিয়েছিল। এখন সরকারের সেই খেতাব বাতিলের উদ্যোগ মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে। এ ধরনের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি কলঙ্ক লেপন করা হলো।”

    তবে আওয়ামী লীগ নেত্রী মতিয়া চৌধুরীর বক্তব্য হচ্ছে,”মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক স্বাধীনতা বিরোধীদের কীভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্টিত করে-আগে সেই প্রশ্নের ফয়সালা হোক।”

    যদিও আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকে বিতর্ককে আমলে নিতে রাজি নন, কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, রাজনৈতিক তাৎপর্য বিবেচনা করা না হলে, সেটা আওয়ামী লীগের জন্য নেতিবাচক হতে পারে।

    সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সোহরাব হাসান বলেছেন, “আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে লাভবান হবে না। কেননা ৭১- এর মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমান বা অন্যান্য সেক্টর কমাণ্ডার বা মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের জন্য বঙ্গবন্ধুর সরকারই তাদেরকে এই খেতাব দিয়েছে। পরবর্তীকালে কার কি রাজনৈতিক ভূমিকা-সেটি নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে।”

    তিনি আরও বলেছেন, “কেউ যদি ফৌজদারি অপরাধ করে তার বিচারও হবে। কিন্তু দণ্ডিত না হওয়া পর্যন্ত কারও খেতাব বাতিল করার কোন যুক্তি নেই।”

    “এটি বিএনপিকে চাপে রাখার জন্য কোন কৌশল হলে সেটা ভাল কৌশল নয়। আর যদি সরকার এরকম সিদ্ধান্ত নেয়, সেটা সরকারের জন্যই ক্ষতিকারক হবে,” সোহরাব হাসান বলেন।

    কর্মকর্তারা বলেছেন, জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিলের সুপারিশের পক্ষে সরকারের সংশ্লিষ্ট কমিটি দালিলিক প্রমাণ সংগ্রহ করছে।