ওয়েছ খছরু,অতিথি প্রতিবেদক:সিলেটে প্রথম স্ত্রীর মামলায় দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘর থেকে গ্রেপ্তার হলো আব্দুল্লাহ আল মামুন। অভিযানের সঙ্গে ছিল প্রথম স্ত্রী হাবিবা আক্তারও। ছাতকের প্রত্যন্ত এলাকা বনগাঁও থেকে রোববার মধ্যরাতে তাকে গ্রেপ্তার করে সিলেটের শাহপরান থানা পুলিশ। অভিযানের সঙ্গে ছাতক থানা পুলিশও ছিল। পুলিশ জানায়, আসামি মামুন অভিযানের সময় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। এ সময় তাকে জাপটে ধরে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল মামুনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। আব্দুল্লাহ আল মামুন ছাতকের বনগাঁও গ্রামের মোশারফ আলীর ছেলে।
বড় ভাই সুজন মিয়ার সঙ্গে বসবাস করতো সিলেট শহরতলীর বড়শালার পর্যটন মোটেল রোডের ভাড়া বাসায়। চার বছরের প্রেমের সূত্র ধরে গত ২৫শে সেপ্টেম্বর বিয়ে করেছিল সিলেটের মেজরটিলার মেয়ে হাবিবা আক্তারকে। দুই পরিবারের সম্মতিতেই কাবিন এবং আকদ হয় মামুন ও হাবিবার। স্ত্রীকে নিজ বাড়ি উঠিয়ে নেয়ার আগেই হাবিবার পিত্রালয়ে গিয়ে ঘর সংসার শুরু করে আব্দুল্লাহ আল মামুন। স্বামী-স্ত্রীর মতো তারা বসবাস করে। কিছুদিন পর স্ত্রীর সঙ্গে মনোমানিল্য দেখা দিলে এক সময় হাবিবার সঙ্গ ত্যাগ করে সে। এমনকি মোবাইল ফোনেও যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। হাবিবার পরিবারের দাবি- যোগাযোগ বন্ধ করার পর মামুনের পরিবারের সাহায্য চাইলে তারাও নানা টালবাহানা করে। তার পরিবারের সদস্যরা রহস্যময় ভূমিকা পালন করে। এই অবস্থায় গত ১৫ই জানুয়ারি হাবিবার বিয়েকে গোপন রেখে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ছনবাড়ি গ্রামের আরো এক মেয়েকে বিয়ে করে মামুন। বরযাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে ধূমধাম করে বিয়ে করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা ছবির মাধ্যমে বিয়ের বিষয়টি জানতে পারেন প্রথম স্ত্রী হাবিবা আক্তার। বিষয়টির সত্যতা জানতে মামুনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাননি। তার বড় ভাই সুজনের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও সদুত্তর মিলেনি। পরে হাবিবা আক্তার বাদী হয়ে সিলেটের শাহপরান থানায় মামুন ও তার ভাই সুজন সহ কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলা দায়েরের পরপরই তদন্ত কর্মকর্তা শাহপরান থানার সাব- ইন্সপেক্টর চন্দ্রশেখর বড়ুয়া বড়শালার পর্যটন মোটেল রোডের ভাড়া বাসা থেকে গ্রেপ্তার করেন বড় ভাই সুজন মিয়াকে। দুই সপ্তাহের অধিক সময় কারাবাসের পর সুজন মিয়া গত বৃহস্পতিবার জামিন পেয়েছেন। এদিকে মামলার প্রধান আসামি আব্দুল্লাহ আল মামুন বিয়ে করা দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে নিজ বাড়ি ছাতকের বনগাঁওয়ে অবস্থান করছিল। গ্রেপ্তার এড়াতে সে সিলেট নগরীতেও আসছিল না। এই অবস্থায় তাকে গ্রেপ্তার করতে গত রোববার ঊর্ধ্বতনদের অনুমতি নিয়ে ছাতক যান সাব-ইন্সপেক্টর চন্দ্রশেখর বড়ুয়া। ছাতক পুলিশ বনগাঁওয়ে অভিযানে বার বার সতর্ক করেছিল এস আই চন্দ্রশেখর বড়ুয়াকে। কারণ বনগাঁও গ্রামটি হচ্ছে দুর্গম গ্রাম। কোম্পানীগঞ্জের নিকটবর্তী হওয়ায় ছাতক থেকে সেখানে সরাসরি গাড়ি নিয়ে যাওয়া যায় না। সুরমা সহ দুটি নদী পাড়ি দিয়ে সিএনজি অটোরিকশা করে মধ্যরাতের দিকে বনগাঁওয়ে মামুনের বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরেই ছিল মামুন। প্রথম স্ত্রী হাবিবা আক্তারের চিহ্নিত মতে রাতে দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘর থেকে মামুনকে গ্রেপ্তার করে প্রথমে ছাতক থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। এরপর ভোররাতের দিকে তাকে সিলেটের শাহপরান থানায় নিয়ে আসা হয়। গতকাল বিকালে তাকে সিলেটের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাব-ইন্সপেক্টর চন্দ্রশেখর বড়ুয়া জানিয়েছেন, ‘মামলার অপর আসামি সুজন মিয়া রোববার দুপুরে তাকে বনগাঁও এলাকায় অভিযানে যেতে বারণ করেছিলেন। সুজন বলেছিলেন- দুর্গম এলাকা হওয়ার কারণে পুলিশ তার এলাকায় অভিযান চালায় না। আগে অসংখ্যবার তার এলাকায় পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে বলে সতর্ক করে দেন। কিন্তু ছাতক থানা পুলিশ ও শাহপরান থানা পুলিশ মিলে অভিযান চালিয়ে দুর্গম জায়গা থেকেই আসামি মামুনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে।’ তিনি বলেন- ‘আসামি সুজনকে সোমবার বিকালে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলার তদন্ত শেষে আদালতে রিপোর্ট দেয়া হবে বলে জানান তিনি।’ অভিযানের সময় সঙ্গে ছিলেন প্রথম স্ত্রী হাবিবা আক্তারও। তিনি জানান, অভিযানের সময় মামুন ঘরেই ছিল। তিনি শনাক্ত করে দেয়ার পর পুলিশ তাকে জাপটে ধরে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে। দুর্গম স্থানে অভিযান চালিয়ে আসামি ধরায় শাহপরান থানা পুলিশকে তিনি ধন্যবাদ জানান। তিনি আরো জানান, ‘মামুন তার বৈধ স্বামী। তাকে এখনো সে ডিভোর্স দেয়নি। দিলেও তিনি ডিভোর্সপত্র পাননি। এ ছাড়া- আকদ হলেও তাকে ঘরে না তুলে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। তিনি এ ঘটনার বিচার সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে চান। কারণ উল্লেখ করে হাবিবা জানান, ‘তিনি এখনো কলেজছাত্রী। আপত্তি সত্ত্বেও পারিবারিকভাবে অনেকটা জোর করেই মামুন ও তার পরিবারের সহযোগিতায় বিয়ে করেছে। আর এখন আমার জীবন নষ্ট করে আরো একটি মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে। তার শাস্তি হওয়া উচিত বলে জানান হাবিবা আক্তার।’ হাবিবার বোন রুজিনা বেগম গতকাল অভিযোগ করেন- মামুনকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল যখন তাকে আদালতে নেয়া হয় তখন তারা সেখানেই ছিলেন। এ সময় মামুন তাকে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছে। এমনকি পুলিশের হাতে আটক অবস্থায় মারধর করতে তেড়ে এসেছে। পুলিশ তাকে আটকানোর পর আদালতের লকআপের বাইরে তাকে ও হাবিবাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে। এসব গালিগালাজ ও হুমকির ঘটনার প্রমাণ তার কাছে রয়েছে। এ ব্যাপারে তারা আদালতের শরণাপন্ন হবেন। মামুন ও তার পরিবার লোভী পরিবার। এক মেয়ের জীবন নষ্ট করে লোভে পড়েই এখন আরেক মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে। তার শাস্তি হওয়া উচিত বলে জানান তিনি। আদালতে নেয়ার পথে মামুন সাংবাদিকদের জানান, ‘হাবিবা ও তার পরিবার তাকে ঠকিয়েছে। তারা বিয়ের আগে অনেক কিছু গোপন করেছিলো বলে জানায় সে।(দৈনিক মানবজমিন )