• ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

আল জাজিজার‘সামি’:বহু নারীর স্বামী আর প্রতারণার আসামী!

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২১
আল জাজিজার‘সামি’:বহু নারীর স্বামী আর প্রতারণার আসামী!

বিবিএন নিউজ ডেস্ক : কখনও তানভীর সাদাত, কখনও সায়ের জুলকারনাইন, আবার কখনও জুলকারনাইন সায়ের খান, এভাবে নাম বদলে প্রতারণাসহ অগণিত অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিটিই আল জাজিরার বিতর্কিত সংবাদ প্রতিবেদন প্রধান উৎস সামি। তার আসল পরিচয় ও কর্মকাণ্ড জানতে  তদন্তে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধ ও প্রতারণামূলক কাজে অংশ নেওয়া তথ্য পাওয়া গেছে। এ নিয়েই ‘সামি কাহিনী।

বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, কৈশোরেই চুরিতে হাত পাকায় সামিউল আহমেদ খান ওরফে শায়ের জুলকারনাইন ওরফে সামি। ১৭ বছর বয়সে ২০০০ সালের ৩০ জানুয়ারি ইসিবিতে কর্মরত মেজর ওয়াদুদের বিদেশ থেকে আনা ট্রাকস্যুট চুরি করে ধরা পড়ে সে। ২০০০ সালের জুলাই মাসে টাইগার অফিসার্স মেস থেকে হাতির দাঁত চুরি করে চট্টগ্রামের নিউমার্কেটে অবস্থিত অঙ্গনা জুয়েলার্সে বিক্রি করেও ধরা পড়ে। বাবার চাকরির সুবাদে নিজেকে কখনো সেনাবাহিনীর সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট, কখনো ক্যাপ্টেন হিসেবে পরিচয় দিত সামি। ২০০১ সালের ২৮ ও ২৯ এপ্রিল ঢাকা সেনানিবাসে নিজেকে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রবেশ করে সে। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বন্ধু উৎপলের কাছে নিজেকে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে প্রমাণের জন্য বেল্ট, বুট ও র‌্যাঙ্ক ইউনিফর্ম কেনে সামি। উৎপলের বাসা থেকেই সেনাবাহিনীর ইউনিফর্ম পরে ট্যাক্সিক্যাব দিয়ে সেনানিবাসসহ ঢাকার প্রথম আলো পত্রিকা অফিস, রাপা প্লাজা, ধানমন্ডি ও চিড়িয়াখানা ঘুরে জাহাঙ্গীর গেট হয়ে সিএমএইচে প্রবেশের সময় বেলা ২টায় মিলিটারি পুলিশের (এমপি) হাতে ধরা পড়ে সামি। এর ঠিক দুই দিন পর ২ মে বাবার অঙ্গীকারনামায় আর্মি এমপি ডেস্ক থেকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান তার প্রকৃত নাম সামিউল আহমেদ খান। অল্প বয়সে মাকে হারানোর পর চুরি ও প্রতারণামূলক অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে বদলে ফেলেন মায়ের রাখা নাম তানভীর মোহাম্মদ সাদাত খান। সব সেনানিবাস থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার সময় তার নাম ছিল ‘সামিউল আহমেদ খান’। মাদক ও অন্ধকার জগতে জড়িয়ে বেছে নেন নতুন নাম শায়ের জুলকারনাইন। কয়েক বছর ধরে জড়িয়ে পড়েন পাহাড়ি উগ্রবাদীদের সঙ্গে।

Image result for আল জাজিরার সেই ‘সামি’

আলজাজিরা ইস্যুতে সহপাঠী ও পরিচিতদের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সামির মুখোশ উন্মোচন করছেন। তাদেরই একজন সামির ইস্পাহানি স্কুলের সহপাঠী ‘সাইফ এম ইশতিয়াক হোসেন’। ২ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টা ১৩ মিনিটে তিনি সামির পরিবার এবং স্কুল ও পরবর্তী কর্মকান্ড নিয়ে একটি বড় স্ট্যাটাস দেন। একই দিন বিকাল ৫টা ১৯ মিনিটে ‘ওমর শরীফ আরেফিন’ নামে আরেকজন সামি সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে।প্রতারণামূলক অপরাধে জড়িত থাকায় তাকে সেনানিবাস থেকে বহিষ্কারও করা হয়। রেব কর্মকর্তা পরিচয়ে আর্থিকপ্রতারণার অভিযোগে ২০০৬ সালে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারও হয়েছিলেন সামি। সর্বশেষ গুজব ও অপপ্রচারের অভিযোগে ২০২০ সালের মে মাসে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে দায়ের করা মামলার অন্যতম আসামি তিনি।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন জনের স্ট্যাটাস থেকে জানা যায়,  বাবা অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল মো. আবদুল বাসেত খানের চার সন্তানের মধ্যে সামিউল আহমেদ খান সবার বড়। জন্ম ১৯৮৪ সালে হলেও স্কুলের তথ্য অনুযায়ী জন্মতারিখ ১৯৮৬ সালের ৮ অক্টোবর। ১৪ বছর বয়সে সামি মাকে হারায়। এর দুই বছর পর বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সৎ মায়ের সংসার থেকেই অন্ধকার জগতে পা বাড়ায় সামি। ক্যাডেট কলেজ থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর ভর্তি হয় কুমিল্লার ইস্পাহানি স্কুলে। ১৫-১৬ বছর বয়স থেকে ড্রাগ নেওয়া, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করাসহ হেন কাজ নেই যা সে করেনি। মাদকাসক্ত হওয়ার কারণে আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু করে সহপাঠী-বন্ধুরাও তাকে এড়িয়ে চলত।র‌্যাব পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতারও হয়েছিলেন সামি। ২০০৬ সালের ২০ জুলাই র‌্যাব কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে রাজধানীর ফার্মগেটের এ জে টেলিকমিউনিকেশন থেকে ৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার মোবাইল ফোন কিনে একটি ভুয়া চেক দেয় সামি। একইভাবে প্রাইজ ক্লাব নামক একটি কম্পিউটার ফার্ম থেকে ১০টি ল্যাপটপ কেনার কথা বলে ২টি ল্যাপটপের গুণগত মানের কথা বলে চেক দিয়ে ২টি ল্যাপটপ নিয়ে আসে সে। চেক ডিজঅনার হলে অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-১ তাকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনার পর তাকে এনপিজি ঘোষণা করে সব সেনানিবাস ও দফতরে অবাঞ্ছিত করা হয়। এ ঘটনার পর অনিয়ন্ত্রিত ও উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের জন্য সামিকে ত্যাজ্য করেছিলেন বাবা লে. কর্নেল (অব.) আবদুল বাসেত। ঠিক এর পরদিন ২০০৬ সালের ২৩ জুলাই এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন তিনি।সামির বিরুদ্ধে একাধিক বিয়ে ও নারী কেলেঙ্কারির তথ্যও পাওয়া গেছে। সেনা কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে প্রথম স্ত্রীকে না জানিয়েই এক সেনা কর্মকর্তার মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন সামি। অ্যান্টেনা ভাঙা ভিএইচএফ (ওয়াকিটকি) নিয়ে মার্কিন দূতাবাসের নিরাপত্তা কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা দেওয়ার নামে কয়েকজনের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ছিল সামির বিরুদ্ধে। ব্যবসার কথা বলেও অনেকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল সে। শ্বশুরের অর্থে হাঙ্গেরিতে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করার পর বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হয় সামি। ব্যবসা-বাণিজ্যের কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য অনেকেই সামিকে খুঁজছেন। ফলে বহুদিন প্রকাশ্যে আসতে পারে না সামি।গুজব ও অপপ্রচারের মামলার একজন আসামী সামি। গত বছর সাইবার ক্রাইম ইউনিট অনলাইনে জাতির পিতা, শেখ হাসিনা ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কটূক্তি ও আপত্তিকর প্রচারণা এবং করোনাভাইরাস নিয়ে অপপ্রচারসহ বিভিন্ন গুজব রটিয়ে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে, তাদের অন্যতম শায়ের জুলকারনাইন সামি। ‘উই আর বাংলাদেশি’ পেজ থেকে রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণার অভিযোগে অভিযুক্তদের ল্যাপটপ ও মোবাইল অনুসন্ধান করে ১১ জনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পান গোয়েন্দারা। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাসনিম খলিল ও সামিসহ ওই ১১ জনের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের মে মাসে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা হয়। এ মামলার প্রতিবাদে কলাম লিখেছিলেন আরেক অপপ্রচারকারী ডেভিড বার্গম্যান।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা নামপ্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বাংলাদেশকে টার্গেট করে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ করার লক্ষ্যেই কল্পিত ফিল্মটি নির্মাণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতারণা ও মিথ্যাচারে সিদ্ধহস্ত বিতর্কিত ব্যক্তিদের দিয়ে আলজাজিরার এই ফিল্ম তৈরির উদ্দেশ্য কারও বুঝতে আর বাকি নেই। তা দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার।(ভয়েস অব পিপলস )