• ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

করোনায় ইংল্যান্ডে মৃতের সংখ্যা লাখ ছাড়ালো

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত জানুয়ারি ১৪, ২০২১
করোনায় ইংল্যান্ডে মৃতের সংখ্যা লাখ ছাড়ালো

বিবিএন নিউজ ডেস্ক: মহামারী বিশেষজ্ঞরা ধারনা করেছিলেন, বৃটেনের করোনায় মৃতের সংখ্যা ৩১ জানুয়ারীর মধ্যে লাখ ছাড়াতে পারে, কিন্তু পরিস্থিতি এখন এতটাই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে যে, ১২ জানুয়ারীতে তা লাখ ছাড়িয়ে গেছে। বুধবার সরকারীভাবে পুর্ববর্তী ২৪ ঘন্টার আক্রান্ত ও মৃতের যে সংখ্যা জানানো হয়েছে, তা অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে। ১২ জানুয়ারী ২৪ ঘন্টায় মোট মারা গেছেন ১ হাজার ৫৬৪ জন। এক বছর আগে যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাস হানা দেয়ার পর থেকে বুধবার পর্যন্ত সর্বমোট ১ লাখ ১ হাজার ১৬০ জনের মৃত্যু হলো করোনায়।

এদিকে পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড বলেছে, মহামারীর প্রথম ঢেউয়ে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে দ্বিতীয় ঢেউয়ে মৃতের সংখ্যা। স্কটল্যান্ডে শনিবার থেকে লকডাউন আরো বেশি কঠোর করা হচ্ছে। ফুড টেকএওয়ে এবং ক্লিক-এন্ড-কালেক্ট সার্ভিস আরো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে। ইউকে প্রধান মন্ত্রী বলেছেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সপ্তাহের ৭ দিন ২৪ ঘন্টা ব্যাপি টিকাদান কার্যক্রম চালানো হবে। পরবর্তী পর্যায়ের ভ্যাকসিন প্রোগ্রামে স্কুল স্টাফরে অগ্রাধিকার দেয়া হবে বলে এডুকেশন সেক্রেটারী গ্যাভিন উইলিয়ামসন জানিয়েছেন। ব্রাজিলে ধরা পড়া কোভিড এর নতুন ধরন নিয়েও ব্রিটিশ সরকার উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। এ কারণে ব্রাজিল থেকে লোকজনের ইউকে আগমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে বলে প্রধান মন্ত্রী বরিস পার্লামেন্টে ইঙ্গিত দিয়েছেন।

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গেনাইজেশন (হু) করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেইন বা বৈশিষ্ট্যের দ্রুত ছড়িয়ে পড়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ইউকে’র স্ট্রেইনটি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি সংক্রামক, যা এরই মধ্যে ৫০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় পাওয়া স্ট্রেইনটি ছড়িয়েছে ২০টি দেশে

ইউকেতে কোভিড কিংবা কোভিড-সম্পৃক্ত জটিলতায় প্রতি ৬৬০ জনে প্রায় ১ জন মারা গেছেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার দিক দিয়ে যুক্তরাজ্য এখন বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে খোরাপ অবস্থায় রয়েছে। এদেশে প্রতি ১ লাখে ১৫১ জন মারা যাচ্ছেন কোভিডে, পক্ষান্তরে আমেরিকায় এই হার লাখে ১১৬ জন, স্পেনে ১১৩ জন এবং মেক্সিকোতে ১০৮ জন।

ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টলের পাবলিক হেলথ বিভাগের ভিজিটিং প্রফেসর, এবং বিশেষজ্ঞদের স্বতন্ত্র গ্রুপ এর সদস্য, গ্যাব্রিয়েল স্কালি বলেছেন, ১ লাখ মানুষের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মহামারী মোকাবেলা কীভাবে করা হচ্ছে, সেটাই ইঙ্গিত করে। রোখা সম্ভব এমন একটি কারণে এক বছরে এমন বিস্ময়কর সংখ্যক লোক মারা গেলো। কভিডের মতো নতুন ও বিপজ্জক এক ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নীতি ও কার্যক্রমের অভূতপূর্ব এক ব্যর্থতার চিহ্ন হচ্ছে এই ১ লাখ মৃত্যু।

মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯৩ হাজার ৪১৮ টি মৃত্যুর সার্টিফিকেটে কারণ হিসেবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া সরকারীভাবে আরো ৭ হাজার ৭৪২ জনের মৃত্যু খবর জানানো হয়, যাদের ২৮ দিনের মধ্যে পজেটিভ টেস্ট হয়েছে।

দ্যা গার্ডিয়ান অনলাইনে বুধবার প্রকাশিত এখন প্রতিবেদনে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের প্রফেসার ক্রিস্টিনা প্যাজেল প্রতিবেদকে বলেন, যুক্তরাজ্যের মৃতের এই সংখ্যা ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থার ইঙ্গিত করে। সেপ্টেম্বর কিংবা অক্টোবরে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার মাধ্যমে আমরা এত প্রানহাণি রুখতে পারতাম। তিনি বলেন, বিজ্ঞানীরা, বিশেষজ্ঞরা সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ভয়াবহতা সম্পর্কে বারবার সতর্ক করেছেন। বিজ্ঞানীরা বলেছেন ডিসেম্বরে ক্রিসমাসের পর পরিস্থিতি গুরুতর আকার ধারন করবে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত অফিসিয়াল স্ট্যাটিক্স বা পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, ২০২০ সাল হচ্ছে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস হচ্ছে এক শ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোকের প্রাণহানির  অর্থাৎ মরণঘাতি বছর।  সরকারি হিসেবে ২০২০ সালে সর্বমোট ৬ লাখ ৮ হাজার মানুষ মারা গেছেন, যার মধ্যে ৮১,৬৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনাভাইরসে।

যখন থেকে হিসাব রাখা হচ্ছে, তখন থেকে এখন পর্যন্ত দ্বিতীয়বারের মতো এক বছরে মোট মৃতের সংখ্যা ৬ লাখ ছাড়িয়ে গেলো। এর আগে ১৯১৮ সালে ভয়াবহ স্পেনিশ ফ্লু মহামারীতে বার্ষিক মৃতের সংখ্যা ছিলো ৬ লাখ ১১ হাজার ৮৬১ জন।

স্ক্যালি বলেন, কোভিড এ আক্রান্ত হয়ে মৃতের চূড়ান্ত সংখ্যা আরো অনেক বেশি হবে। তাঁর ধারনা আরো ৫০ হাজার মানুষের প্রাণহানির পর ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আসবে। (জনমত)