• ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

করোনার টিকা আবিষ্কার কারি এই দম্পতি পাল্টে দিতে পারেন বিশ্বকে

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত ডিসেম্বর ২০, ২০২০
করোনার টিকা আবিষ্কার কারি এই দম্পতি পাল্টে দিতে পারেন বিশ্বকে

বিবিএন নিউজ ডেস্ক :: এক দম্পতির আবিষ্কার করা করোনা ভাইরাসের টিকা পাল্টে দিতে পারে পুরো বিশ্বকে। তারা এমনই স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। এ জন্য তাদেরকে বলা হচ্ছে ‘ড্রিম টিম’। মেডিকেল গবেষণায় তাদের ভালবাসা থেকেই একে অন্যের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। তারা হলেন উগুর শাহিন এবং তার স্ত্রী ওজলেম তুয়েরেসি। বায়োএনটেক করোনা ভাইরাসের যে টিকা আবিষ্কার করেছে তা এই দুই বিজ্ঞানীর হাতে সৃষ্ট। এরই মধ্যে ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানি ফাইজার এবং বায়োএনটেক ঘোষণা দিয়েছে, তাদের টিকা শতকরা ৯০ ভাগই কার্যকর। এর ফলে চারদিকে এক আশার আলো জেগে উঠেছে।

সবাই এই দু’বিজ্ঞানীর ওপর আলোকপাত করছেন। ফাইজার কোম্পানির ২০০ কোটি ডলারের বাণিজ্যের পিছনে রয়েছেন তারা। এর মধ্যে উগুর শাহিন এখনও তার ‘মাউন্টেইন বাইক’ চেপে কর্মক্ষেত্রে যোগ দেন। মাথায় থাকে বাইসাইকেল চালানোর হেলমেট। আর পিঠে থাকে ব্যাকপ্যাক। তা নিয়েই তিনি অতি সাধারণ জীবন যাপন করেন। কোনো বিলাসিতা নেই তার বা তাদের জীবনে। জার্মানির বায়োএনটেকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এখন ৫৫ বছর বয়সী এই চিকিৎসকই। আর তার স্ত্রী ৫৩ বছর বয়সী ওজলেম তুয়েরেসি বায়েএনটেকের পরিচালনা পরিষদের ফেলো সদস্য। তাদের প্রশংসা পশ্চিমা দুনিয়া মুখর। ফাইজার এবং বায়োএনটেক তাদের উৎপাদিত টিকাকে শতকরা ৯০ ভাগ কার্যকর ঘোষণা দেয়ার পর বৈশ্বিক করোনা ভাইরাসের টিকার দৌড় এক নতুন মাত্রা পেয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ডেইলি মেই।

উগুর শাহিনের জন্ম তুরস্কে। তিনি বড় হয়েছেন জার্মানিতে। সেখানে গাড়ি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফোর্ডের একটি কারখানায় কাজ করতেন তার পিতামাতা। উগুর শাহিন একজন প্রশিক্ষিত চিকিৎসক। একই সঙ্গে তিনি রোগ প্রতিরোধ বিষয়ক একজন প্রফেসর এবং গবেষকও। তিনি জার্মানির কলোগনিতে হাসপাতালে শিক্ষাবিদ হিসেবে কাজ করেছেন। একই কাজ করেছেন হামবার্গের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় শহরে। সেখানেই জীবনে ক্যারিয়ার গড়ার প্রথমদিকে তিনি রোগ প্রতিরোধ বিশেষজ্ঞ মিস ওজলেম তুয়েরেসির সাক্ষাত পান। তখন থেকেই মেডিকেল গবেষণা এবং অনকোলজি নিয়ে গবেষণায় অভিন্নভাবে কাজ শুরু করেন। আস্তে আস্তে তাদের মধ্যে জানাশোনা হয়। মন দেয়া নেয়া হয়। এক পর্যায়ে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এউল্লেখ্য মিস ওজলেম তুয়েরেসিও এক তুর্কি চিকিৎসকের মেয়ে। তার পিতাও তুরস্ক থেকে জার্মানিতে অভিবাসী হয়েছিলেন। একবার সাক্ষাৎকারে ওজলেম তুয়েরেসি বলেছিলেন, তারা গবেষণায় এতটাই নিজেদেরকে নিয়োজিত রেখেছিলেন যে, বিয়ের দিনও গবেষণায় ব্যস্ত ছিলেন তারা। দু’জনে মিলে ক্যান্সোরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করতে থাকেন। প্রতিটি টিউমারের ব্যতিক্রম জেনেটিক গঠন চিহ্নিত করার চেষ্টা চালিয়ে যান। ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করা এন্টিবডি তৈরিতে তারা আত্মনিয়োগ করেন। অবশেষে ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠা করেন গ্যানিমেড ফার্মাসিউটিক্যালস। এখান থেকেই তাদের উদ্যোক্তা জীবন শুরু। কিন্তু ওই সময় মেইনজ ইউনিভার্সিটিতে একজন প্রফেসর হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন বিজ্ঞানী শাহিন। তিনি কখনো একাডেমিক গবেষণা এবং শিক্ষাদান ত্যাগ করেন নি। ফলে জাপানের অ্যাস্টেলাসের কাছে ২০১৬ সালে তারা ১৪০ কোটি ডলারে বিক্রি করে দেন গ্যানিমেড।

এরপর ২০০৮ সালে তারা প্রতিষ্ঠা করেন বায়োএনটেক। ক্যান্সার প্রতিরোধী নানা রকম ওষুধ ও গবেষণা নিয়ে কাজ করার জন্য তাদের এই উদ্যোগ। এই কোম্পানিতে ৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করে বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। তাদের এই প্রতিষ্ঠান এইডস সৃষ্টিকারী এইচআইভি এবং যক্ষা বিষয়ক কর্মসূচিতে কাজ করতে থাকে।

সহকর্মীরা শাহিনকে একজন ঠান্ডা মাথার মানুষ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি কোম্পানির শেয়ারের মূল্য কি সেদিকে নজর দেন না। তবে তিনি বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল পড়ার দিকে বেশি আগ্রহী। জার্মান পত্রিকা ওয়েল্ট অ্যাম নেটাগ-এর মতে, জার্মানিতে বর্তমানে যে ১০০ ধনী আছেন, তার মধ্যে অন্যতম ডক্টর শাহিন ও তার স্ত্রী ওজলেম তুয়েরেসি। এমআইজি এজির পরিচালনা পরিষদের সদস্য ম্যাথিয়াস ক্রোমায়ারও বিনিয়োগ করেছেন বায়োএনটেকে। তিনি বলেছেন, এত সম্পদের মালিক হওয়া সত্ত্বেও ডক্টর শাহিনের ব্যক্তিত্বে পরিবর্তন হয়নি। তিনি অমায়িক। তার মতে, এখনও ব্যবসায় মিটিংয়ে শুধুমাত্র জিন্স পরেই হেঁটে এসে যোগ দেন শাহিন। মাথায় থাকে তার বাইসাইকেল চালানোর সময়কার হেলমেট। আর থাকে পিছনে ব্যাকপ্যাক। ডক্টর শাহিনের সঙ্গে ২০ বছর ধরে মেইনজ ইউনিভার্সিটিতে ফেলো প্রফেসর হিসেবে কাজ করছেন ম্যাথিয়াস থিওবল্ড। তিনি বলেছেন, ডক্টর শাহিন অত্যন্ত আধুনিক, উদারমনা একজন মানুষ। তাকে দেখে মনেই হবে না তিনি এত বড়মাপের মানুষ। কিন্তু তিনি নিজে একটি কাঠামো সৃষ্টি করতে চান, যেখানে তার দৃষ্টিভঙ্গির বাস্তবায়ন ঘটবে।(ব্রিট বাংলা )