লতিফুর রহমানরাজু সুনামগঞ্জ: পর পর চার বার সুনামগঞ্জে বন্যায় হাওরগুলোতে পানিতে এখনও পরিপূর্ণ রয়েছে। খুব ধীর গতিতে নামতে শুরু করেছে হাওরের পানি। পানি ধীরে নামায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বোরো আবাদ বিলম্বিত হতে পারে এমন আশংকা স্হানীয় কৃষক সহ সবার। কৃষকরা জানিয়েছেন, হাওরের পানি নামতে আরও ১৫ থেকে ২০ দিন লাগবে। পানি দেরিতে নামায় জেলার বিভিন্ন হাওরে এখনো বীজতলা তৈরী করতে দেরি হচ্ছে। পানি এভাবে দেরিতে নামলে বোরো চাষাবাদ ও ধান পাকার মৌসুমে ফসল তলিয়ে যাবার আশঙ্কা করছেন হাওরাঞ্চলের কৃষকরা। উচ্চ ফলনশীল আগাম জাতের বোরো ধান লাগাতে কৃষকদেরকে আহবান জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। আর দ্রুত হাওরের পানি নেমে যাবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
কৃষকরা জানান, সুনামগঞ্জের ১১ উপজেলার তাহিরপুরের শনির হাওর, মাটিয়ান হাওর, সদরের দেখার হাওর, বিশ^ম্ভরপুরের খরচার হাওর, দিরাই উপজেলার বরাম হাওর, কালিয়াকোটা হাওর, দোয়ারাবাজারের খানলার হাওর এবং শাল্লা-নেত্রকোণার খালিয়াজুরি, ছায়ার হাওরসহ জেলার ছোটবড় সবকটি হাওরে পানি এখনও প্রচুর। । এর মধ্যে কয়েকটি হাওরে ধীর গতিতে পানি নামতে শুরু করেছে। সময় মতো হাওরের পানি না নামলে বোরো ফসল নিয়ে চিন্তিত রয়েছে কৃষকরা। এই অবস্থার পরিবর্তন না হলে এবারের বোরো আবাদের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হতে পারে।
তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওরের বশির উদ্দিনসহ একাধিক কৃষক বলেন, গতবছর এ সময়ে শনির হাওর, মাটিয়ান হাওরে বোরো আবাদ শুরু হয়েছিল কিন্তু এবার তার উল্টো। এখনো হাওর থেকে পানি নামছে না। । সময় মতো বোরো ধান গোলায় তোলা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন তারা।
দেখার হাওরেপাড়ের তাজপুর গ্রামের কৃষক ইফসুফ আলী বলেন, অন্যান্য বছরের মতো এবারও সাত বিগা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করবো। কিন্তু পানি নামছে না। দেখার হাওরে একটু পানি নামতেছে। বীজতলা শুকিয়েছে। বীজতলায় দেরিতে বীজ বপন করতে হচ্ছে। হাওরে যে পরিমান পানি এগুলো নামতে গেলে আরও ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগবে। পানি না নামায় বোরো ধান চাষাবাদ নিয়ে চিন্তায় আছি।
দেখার হাওরে এবার ১৮ ভিগা জমিতে বোরো ধান আবাদ করার জন্য বীজতলা প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাজপুর গ্রামের আরেক কৃষক জিয়া উদ্দিন। তিনি বলেন, অন্য বছর কার্তিক মাসে বোরো আবাদের বীজতলার কাজ শেষ হয়। কিন্তু অগ্রহায়ন মাসেও হাওরের পানি একটু একটু করে নামতে শুরু করেছে কিন্তু যে হারে পানি নামছে এরখম থাকলে এবার হয়তো বোরো ধান পাকার আগে বন্যায় তলিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জের ছোটবড় ৪২টি হাওরে ১২ হাজার ৭ কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের লক্ষমাত্রা রয়েছে। হাওরে বিভিন্ন উপজেলায় কর্মকরত সহকারী প্রকৌশলী ও উপ-সহকারী প্রকৌশলীদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তরফ হতে ২২টি জরিপ টিম প্রি-ওয়ার্ক কাজ শেষ করে বাাঁধের কাজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়়েছে ।কাজ শুরু করার আগেই মন্ত্রণালয় ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য এবার প্রাথমিকভাবে ৬২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্ধ দিয়েছে। গত ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করার জন্য মন্ত্রণালয় ৬৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বরাদ্ধ দিয়েছিল মন্ত্রণালয়। তবে কাবিটা নীতিমালা ২০১৭ এর আলোকে আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যেই পিআইসি (কৃষকদের নেতৃত্বে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) গঠন শেষ করে কাজ শুরু করার কথা রয়েছে।
জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর বিভাগের উপ-পরিচালক ফরিদুল হাসান বলেন, বোরো মৌসুমে এবার সুনামগঞ্জে দুই লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। হাওরে একটু ধীরে পানি নামছে। এ পর্যন্ত জেলায় ৯ হাজার ২’শ ৮৩ হেক্টর বীজতলা প্রস্তুত করা হয়েছে। আমরা আশা করছি আগামী ১৬-১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে হাওরের নিচু এবং উঢ়ুঁ জমিতে বোরো ধান রুপন করা শুরু হবে। আমরা অল্পদিনে উচ্চ ফলনশীল আগাম জাতের বোরো ধান ব্রি ধান ২৮, ব্রি ধান ৮৮, হাইব্রিড লাগানোর পরামর্শ দিচ্ছি কৃষকদেরকে। তাই কৃষকদেরকে আহবান করবো আগাম জাতের ধান আবাদ করলে দ্রুত সময়ে পেকে যাবে এবং ফলনও ভালো হবে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, গত চার দফা বন্যায় জেলার বিভিন্ন হাওরের পানি নামতে দেরি হচ্ছে। আমরা জনপ্রতিনিধিদেরকে নিয়ে দ্রুত হাওরের পানি নামার জন্য হাওর রক্ষা বাঁধের কিছু নিদিষ্ট জায়গা কেটে দিচ্ছি এবং খালগুলো খনন করা হচ্ছে। বাঁধ কেটে দেয়ায় দ্রুত পানি নামছে। কৃষকরা আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই সপ্তাহ দিনের মধ্যে পানি নেমে যাবে। আমরা আশা করি নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে বোরো ধান রূপন করতে পারবেন তারা। বন্যার আগে সোনালী ফসল গোলায় তুলতে পারবেন।
জেেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ জানান এবার হাওর থেকে দেরীতে পানি নামার কারণে হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ সময় মতো শুুরু হয়নি ।ইতিমধ্যেই সব কটি উপজেলার কাজ শুুরু হয়েছে পানি নামতে শুরু করেছে আশা করি সময় মতো হাওরের ফসল রক্ষ বাঁধের কাজ শেষ করার।