সিলেট প্রতিনিধি: কবি আব্দুল বাসিত মোহাম্মদ-এর মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনা নয়, একটি একধরণের হত্যা। এই হত্যার জন্য সিলেট সিটি করপোরেশন দায়ী দায়ী।কবি আব্দুল বাসিত মোহাম্মদের মৃত্যুতে সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন আয়োজিত নাগরিকবন্ধনে অংশ নেওয়া বক্তারা এমন অভিযোগ করেছেন।সিলেটের আম্বরখানায় নির্মাণাধীন ড্রেনের উন্মুক্ত খাদে পড়ে গত ১০ ডিসেম্বর কবি আব্দুল বাসিত মোহাম্মদ-এর মৃত্যু হয়।
এই মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া, নগর উন্নয়ন ও সংস্কার কাজে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বেষ্টনী রাখা এবং নিহত কবির পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানিয়ে রোববার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সম্মুখে সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন-এর আহ্বানে সংক্ষুব্ধ নাগরিকবন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত সভাপতি আল-আজাদ-এর সভাপতিত্বে ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন (ইমজা)-র সাধারণ সম্পাদক সজল ছত্রীর সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে মূল বক্তব্য রাখেন সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নিহত কবির ছোট ভাই মোহাম্মদ এহিয়া আহমেদ, সাংস্কৃতিক সংগঠক এনামুল মুনির, ভাষা শহীদ মতিন উদ্দিন চৌধুরী যাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রাহক ডা. মোস্তাফা শাহজামান চৌধুরী বাহার, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক তাহমিনা ইসলাম, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছামির মাহমুদ, বঙ্গবন্ধু গবেষণা সংসদের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি বিধান সরকার, দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা’র সংগঠক দেবাশীষ দেবু, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভানিটির ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক প্রণব কান্তি দেব, ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশরাফুল কবির, লেখক ডা. এনামুল হক, মহানগর জাসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম চৌধুরী, লেখক ও আইনজীবী আব্দুল মুকিত অপি, প্রকাশক রাজিব চৌধুরী, সাংস্কৃতিক কর্মী রাজী রাসেল, অদিতি দাস, রুবেল মিয়া প্রমুখ।
প্রায় ঘণ্টাব্যাপি চলা এই কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, নগর উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন করার নামে সিলেট মহানগরীতে একটি হযবরল অবস্থা তৈরি হয়েছে। দিনের পর দিন ভাঙা-গড়ার খেলা চলছে। ভাঙা-গড়ার শত কোটি টাকার কর্মযজ্ঞে পথচারীদের নিরাপত্তার জন্য আধুনিক নিরাপত্তা বেষ্টনী দূরে থাক, সামান্য লাল কাপড়ের নিশানা পর্যন্ত ছিল না। সিলেট সিটি করপোরেশনের এই অব্যবস্থাপনার মাশুল দিতে হয়েছে একজন কবিকে। এই নগরের উন্নয়ন কর্মের গর্তে পড়ে গত ৯ই ডিসেম্বর নগরীর আম্বরখানা এলাকায় মারাত্মক ভাবে আহত হয়েছিলেন কবি ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল বাসিত মোহাম্মদ। পরদিন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এই মৃত্যুতে সিলেটের সর্বস্তরের মানুষ ব্যথিত হয়েছে। আমরা ব্যথিত ও সংক্ষুব্ধ হয়েছি।
সভাপতির বক্তব্যে আল আজাদ সিলেট সিটি করপোরেশনের হযবরল উন্নয়নকর্মে কবি ও শিক্ষক আব্দুল বাসিত মোহাম্মদ-এর মর্মান্তিক মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং কবির পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানান।
কবি আব্দুল বাসিত মোহাম্মদ-এর পরিবারের পক্ষ থেকে নিহতের ছোট ভাই মোহাম্মদ এহিয়া আহমেদ বলেন, আমার পরিবারের মত এই নগরীর অপরিকল্পিত উন্নয়নে আর কেউ যেন প্রিয়জনকে না হারান সেই দাবি জানাই।
মূল বক্তব্যে সংগঠনের সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম বলেন, দুর্ঘটনার পাঁচ দিন অতিবাহিত হতে চললো। সিলেট সিটি করপোরেশন থেকে অদ্যাবধি এই দুর্ঘটনার দায় স্বীকার করে কবির পরিবারকে আনুষ্ঠানিক সমবেদনা প্রকাশ করেনি। এমনকি আহত কবিকে উন্নত চিকিৎসা প্রদানে সিলেট সিটি করপোরেশনের সহযোগিতার কোন তথ্য আমাদের জানা নেই। আর এমন হওয়ার কারণ নাগরিকদের নীরবতা। এই দুর্ঘটনার সাথে সাথেই কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার প্রয়োজন ছিল। তাহলে কবি’কে বাঁচাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হতো। আর এই দুর্ঘটনায় মৃত্যুর জন্য কবির পরিবারের সামনে হাজির হয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জোড় হাতে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। কিন্তু তা হয়নি। এ অবস্থায় সিলেটের নাগরিকদের ব্যতিক্রমী সংগঠন সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন এই সংক্ষুব্ধ নাগরিকবন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
উল্লেখ্য নাগরিকদের সাথে সংগঠিত অনেক অন্যায়ের প্রতিবাদে যখন কেউ আওয়াজ তোলে না অথবা সংগঠিত প্রতিবাদ করা নিয়ে দোদুল্যমান সেখানে সিলেটের ‘সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন’ প্রতিবাদ জানাতে এগিয়ে আসে।