বিবিএন নিউজ ডেস্ক:কেনিয়ার কেলোলিনির স্থানীয় মুসলিম ও খ্রিস্টানদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিবোধ তৈরি করতে অভিনব পন্থা অবলম্বন করা হয়। মুসলিম কমিউনিটি নিষ্পত্তি হওয়া জমিতে মসজিদের এমন এক নাম নির্বাচন করে যা সবার নজর কাড়ে। কিসুমুর ওই বিবাদমান মসজিদের নাম রাখা হয় মসজিদ ইসা বিন মারয়াম। অভিনব নামকরণ মুসলিমদের সঙ্গে খ্রিস্টানদের মধ্যে সম্প্রীতিবোধ তৈরির পথ উম্মোচন করে।
কেনিয়ার কেলোলিনির একটি জমির মালিকানা নিয়ে স্থানীয় মুসলিম ও খ্রিস্টানদের মধ্যে কয়েক দশক যাবত বিরোধ চলছিল। স্থানীয় মুসলিম এসোসিয়েশন্স ও সেভেনথ ডে এডভেন্টিস্ট চার্চ (এসডিএ)-এর মধ্যে এ বিরোধ চলে। অবশেষে গত অক্টোবরে কিসুমু-এর ভূমি ও পরিবেশ বিষয়ক আদালত মুসলিমদের মালিকানাধীন বলে রায় দিলে দীর্ঘ দিনের দ্বন্দ্বের অবসান ঘটে। বর্তমানে অস্থায়ী মসজিদে মুসলিমরা নিয়মিত এবাদত করে। অবশ্য জমির ওপর স্থায়ী মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। তবে নির্মাণকাজ এখন সাময়িকভাবে বন্ধ আছে।
মসজিদের অভিনব নামচয়নের মধ্য দিয়ে মুসলিমরা এসডিএ চার্চকে এ বার্তা পৌঁছে দেয় যে তাঁরা এক ও তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়তে আগ্রহী। মসজিদের মুয়াজ্জিন আবদুর রশিদ বলেন, ‘জমি নিয়ে আমাদের মধ্যে দীর্ঘকাল বিবাদ ছিল। আর এ কারণে আমরা মসজিদের এই নাম নির্বাচন করেছি। আর খ্রিস্টানদের সঙ্গে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘মুসলিমরা ইসা (আ.)-এর প্রতি একজন নবী হিসেবে বিশ্বাস রাখে। এবং তিনি মুহাম্মাদ (সা.)-সহ বিশিষ্ট চারজন নবীর একজন। তাঁর নাম নির্বাচনের মাধ্যমে আরো প্রমাণিত হয় যে মুসলিমরা আরো বিশ্বাস করে যে তিনি আবার পৃথিবীতে আসবেন।’
একজন জেষ্ঠ্য সরকারি কর্মকর্তা মসজিদে নিয়মিত ইবাদত করেন। জমি নিয়ে দায়ের করা মামলায় মুসলিমদের হয়ে তিনি কাজ করেছেন। মসজিদের নাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মূলত নামটি অস্বাভাবিক কোনো নাম নয়। কারণ ইসলামে ইসা (আ.) স্বীকৃতি একজন নবী।’
তিনি আরো বলেন, ‘ইসা (আ.)-কে ইঞ্জিল কিতাব দেওয়া হয়েছে। যেমন মুহাম্মাদ (সা.)-কে কোরআন দেওয়া হয়েছে। এই নামে মসজিদের নামকরণ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের এই বার্তা দেয় যে আমরা এক সূত্রের অনুসারী। আমরা সর্বদা এক ছিলাম।’
এদিকে ওই অঞ্চলের অনেক খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মসজিদের নামকরণের উদ্যোগকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, এটি আমাদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকে নিশ্চিত করবে।
জোসেফ অদিম্বো নামের একজন খ্রিস্টান বলেন, ‘এটি উত্তম আচরণের বহিঃপ্রকাশ। আমি মনে করি, এটি দৃঢ়ভাবে প্রমাণ করে যে মুসলিম ও খ্রিস্টানরা একে অপরকে ভাই-বোন হিসেবে বিবেচনা করে।’
জানা যায়, ১৯৮৫ সালে ২৫ সেপ্টেম্বর জমি নিয়ে সর্বপ্রথম বিতর্ক তৈরি হয়। তখন মুসলিম এসোসিয়েশনের সম্পাদক মুহাম্মাদ আবদুল সালেহ নতুন মসজিদ নির্মাণের আবেদন করে ভূমি কমিশনারকে চিঠি দিয়েছিল। দেখা যায়, রামিসি সুগার কর্তৃপক্ষ ওই জমিতে তাদের ৪০ বছরের ইজারা শেষ করলেও তাদের নাম ব্যবহার করে বিতর্ক তৈরি করে। কারণ নাম ব্যবহার করে তারা বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ নিশ্চিত করতে চাচ্ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা ব্যর্থ হয়।
অবশেষে মুসলিম এসোসিয়েশন, প্রাদেশিক কমিশনার ও জেলা ভূমি নিবন্ধক প্রতিনিধিরা দীর্ঘ ১২ বছর আলোচনা-পর্যালোচনার পর ব্যাংককে একথা জানিয়ে দেয় যে জমিতে কোনো সমস্যা ছিল না। এরপর মুসলিম এসোসিয়েশন ভূমি কৃর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র না নিয়ে স্থানটি দখলে নেয়। কিন্তু ২০১০ সালে একই জমিতে এসডিএ সার্চ দাবী করে বসে। মুসলিম এসোসিয়েশনকে আদালতের শরণাপন্ন হয়ে মামলার নিষ্পত্তি সম্পন্ন করতে বাধ্য হয়। অবশেষে অক্টোবর মাসে বিচারপতি ওম্বওয়ে জমি চার্চের মালিকানাধীন নয় বলে জানিয়েছেন।
সূত্র : দ্য স্ট্যান্ডার্ড মিডিয়া/ কালের কন্ঠ)