বিবিএন নিউজ ডেস্ক : কোন ধরনের চুক্তি ছাড়াই শেষ হয়েছে সোমবারের ব্রেক্সিট আলোচনা। তবে এখনো একটি চুক্তি আশা করছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। শেষ চেস্টা হিসেবে এই সপ্তাহে ব্রাসেলস যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন তিনি।
আজ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লায়নের সাথে তার ৯০ মিনিট ফোনে কথা হলেও দুই নেতা সমঝোতায় পৌছাতে ব্যর্থহন।উভয় পক্ষ যৌথ বিবৃতি বলেছেন, আলোচনা হলেও কোন চুক্তির শর্ত সেখানে ছিলনা।
এখনো যে বিষয়গুলো বড় ধরনের মত পার্থক্য রয়েছে, তার মধ্যে সমূদ্রে মাছ ধরা, ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার নিয়ম এবং যেকোন প্রশাসনিক চুক্তির বিষয়।বিবৃতিতে উভয় নেতা জানান, তারা তাদের প্রধান আলোচকদের স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করতে বলেছেন।
সপ্তাহান্তে শীর্ষ স্তরে আলোচনার পর ব্রেক্সিট পরবর্তী সম্পর্কের লক্ষ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও ব্রিটেনের আলোচনার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার ইইউ শীর্ষ সম্মেলনের আগে বিষয়টির নিষ্পত্তির চেষ্টা চলছে।
জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েছে ভেলে লিখেছে, আট মাসে যা সম্ভব হলো না, মাত্র দুদিনে সেই অসাধ্যসাধনের প্রচেষ্টা কতটা ফলপ্রসু হবে, সে বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছে না। ইইউ ও ব্রিটেনের মধ্যস্থতাকারীরা সপ্তাহান্তে হাল ছেড়ে দেয়ার পর দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনা কার্যত শেষ হয়ে গিয়েছিল।
শনিবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন টেলিফোনে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পর শেষ চেষ্টা চালাতে সম্মত হন। তারই আওতায় রোববার ও সোমবার দুই পক্ষের মধ্যস্থতাকারীরা আবার মুখোমুখি হন।
গত মার্চ থেকে শুরু হয় ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নির্ধারণের এই আলোচনা। একটি ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী উভয় পক্ষ। বেশির ভাগ বিষয়ে একমতও তারা। কিন্তু গোল বেঁধেছে মূলত তিনটি বিষয়ে।
জোটের বর্তমান নীতি অনুযায়ী যুক্তরাজ্যের জলসীমায় অবাধে মাছ শিকার করতে পারে প্রতিবেশী ইইউভুক্ত দেশগুলো। ইইউ চায় এ সুযোগ বলবৎ রাখতে। অন্যথায় ইইউর বাজারে ব্রিটিশদের শুল্কমুক্ত মাছ রপ্তানির সুযোগ দিতে রাজি নয় তারা। বাজার প্রতিযোগিতায় যুক্তরাজ্য যাতে অন্যায় সুবিধা নিতে না পারে, সে জন্য কর্মী অধিকার ও পরিবেশবিষয়ক আইনগুলো সমান রাখার পাশাপাশি যুক্তরাজ্য যাতে কোম্পানিগুলোকে সরকারি সহায়তা দিতে না পারে, সেটি নিশ্চিত করতে চাইছে ইইউ। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য চুক্তির কোনো নিয়ম ভঙ্গ করলে শুল্ক আরোপের মাধ্যমে সাজা দিতে চায় ইইউ। আর উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে, তা সুরাহার দায়িত্ব ইইউ আদালতের কাছেই ন্যস্ত রাখতে চায় তারা।
তবে তিনটি বিষয়ে যুক্তরাজ্য আপত্তি জানিয়ে বলেছে, ব্রেক্সিট বা ইইউ জোট থেকে বেরিয়ে আসার মূল উদ্দেশ্যই হলো ইইউর অধীনতা ত্যাগ করা। দেশের সার্বভৌম অধিকার ক্ষুণ্ন হয়, এমন কোনো শর্তে রাজি হতে পারবে না তারা।
চুক্তি সম্পাদনের পর সেটি ইইউর ২৭টি ভাষায় অনুবাদ করতে হবে। সদস্যদেশগুলোর আপত্তি থাকলে তা সুরাহা করতে হবে। প্রতিটি সদস্যদেশের পার্লামেন্টের অনুমোদনের পর চুক্তিটি ইইউ পার্লামেন্টে পাস করতে হবে। একইভাবে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টেও চুক্তিটি পাস হতে হবে। আর সব কটি কাজ ৩১ ডিসেম্বরের আগেই শেষ করতে হবে। তাই দর-কষাকষির সময় আর নেই বললেই চলে।
এদিকে আগামী বৃহস্পতিবার ইইউ নেতারা এক সম্মেলনে মিলিত হবেন। ওই সম্মেলনেই চুক্তিটি অনুমোদন দিতে চান তাঁরা।
চুক্তি সম্পাদনে ব্যর্থ হলে উভয় পক্ষের জন্য তা মারাত্মক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষতির কারণ হবে। কেননা, উভয় পক্ষের মধ্যে শুল্কমুক্ত অবাধ বাণিজ্য সুবিধা আর থাকবে না। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম মেনে লেনদেন করতে হবে, শুল্ক আরোপ হবে। ফলে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। এ ছাড়া আমলাতান্ত্রিক কাজ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি সীমান্তে গাড়ি পারাপারে সৃষ্টি হবে জটিলতা(ওয়ান বাংলা)