• ১লা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

যুক্তরাজ্য করোনা প্রতিরোধে নতুন দিগন্তে উপনীত

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৩, ২০২০
যুক্তরাজ্য করোনা প্রতিরোধে নতুন দিগন্তে উপনীত

বিবিএন নিউজ ডেস্ক :: করোনাভাইরাস প্রতিরোধের টিকা অনুমোদনের মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্য এক নতুন দিগন্তে উপনীত হয়েছে।  বিশ্বের প্রথম দেশ হিসাবে ফাইজার/বায়োএনটেকের করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। সরকার ও  স্বাস্থ্য বিভাগ ছিল আজ টক অব দ্য কান্ট্রি। রেডিও-টিভিসহ সকল সংবাদমাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ ও বিশ্লেষণ হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেছেন, ভ্যাকসিনের মাধ্যমে সুরক্ষার ফলে আমাদের জীবনমান পূর্বাবস্থায় ফিরে আসবে এবং অর্থনীতিকে আবারও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ হবে।

স্বাস্থ্য সচিব ম্যাট হ্যাঁকক বলেছেন, বিজ্ঞানের প্রতি যারা বিশ্বাস করেন তাদের সকলের জন্য আজ একটি বিজয়। তিনি জনগণকে অভয় দিয়ে বলেন, আমি এখন আত্মবিশ্বাসের সাথে সুসংবাদ দিতে পারি যে, এই বসন্ত থেকে ইস্টার এবং পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি আরও ভাল হতে থাকবে। আমরা প্রত্যেকে আগামী গ্রীষ্ম যথাযথ ভাবে উপভোগ করতে পারবো।

ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এমএইচআরএ বলছে, ফাইজার/বায়োএনটেকের করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের প্রতিরোধে ৯৫ শতাংশ সক্ষম। তাই এটি এখন ব্যবহারের জন্য নিরাপদ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা মানুষজনের ওপর টিকার প্রয়োগ শুরু হবে।

চার কোটি ভ্যাকসিন ডোজের চাহিদা দিয়েছে যুক্তরাজ্য, যা দিয়ে দুই কোটি মানুষকে টিকা দেয়া যাবে। জনপ্রতি দুইটি করে ডোজ দেয়া হবে।

খুব তাড়াতাড়ি এক কোটি টিকার ডোজ পাওয়া যাবে। বাকিগুলোও পর্যায়ক্রমে চলে আসবে।

সাধারণত টিকা তৈরীর সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে এক দশকের বেশি সময় লেগে যায়, সেখানে মাত্র ১০ মাসে এই টিকার আবিষ্কারের প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে। এপর্যন্ত ছটি দেশে ৪৩,৫০০ জনের শরীরে ফাইজার/বায়োএনটেক টিকার কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে এবং এতে ঝুঁকিপূর্ণ কিছু পাওয়া যায়নি।
ভ্যাকসিন প্রাপ্তি ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে অনেক আলোচনা ও বিতর্ক চলছে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছেন, কারা প্রথমে ভ্যাকসিনটি পাবেন তার জন্য একটি সুস্পষ্ট অগ্রাধিকারের তালিকা রয়েছে। কেয়ার হোমের বাসিন্দা এবং কর্মীরা তালিকার শীর্ষে রয়েছেন। তবে ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত অপারেশনাল জটিলতার ফলে কিছুটা ব্যত্যয় ঘটতে পারে।
ভ্যাকসিন আসার সাথে সাথে এটিকে সরাসরি বড় বড় হাসপাতালে পাঠানো হবে। যাদের কাছে তা  সংরক্ষণের জন্য অতি-ঠান্ডা সুবিধা রয়েছে। কারণ প্রতিষেধক সমূহ মাইনাস ৭০ ডিগ্রির মধ্যে রাখতে হবে। আর সেখান থেকে মাত্র একবার সরানো যাবে। কোথাও নিতে হলে ১ হাজার ভ্যাকসিনের বান্ডিল এক সাথে নেয়া লাগবে।
যেসব কেয়ার হোমে মাত্র কয়েক ডজন বাসিন্দা রয়েছেন সেখানে এধরণের বান্ডিল পাঠালে বিপুল পরিমাণ ভ্যাকসিন নষ্ট হবে। ফলে ভ্যাকসিন বিতরণের দায়িত্বে থাকা এনএইচএস প্রথমে হাসপাতালগুলি থেকে টিকা দান কার্যক্রম পরিচালনা করবে। তবে এনএইচএস এবং কেয়ার হোম কর্মীদের টিকা দেওয়ার পাশাপাশি বয়স্কদের মধ্যে যারা হাসপাতালে আসবেন তাদেরও টিকা দেওয়ার অনুমতি দেবে।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, যতক্ষণ পর্যন্ত ফাইজার ভ্যাকসিন সমুদয় পাওয়া না যাবে বা অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ভ্যাকসিন না আসবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এনএইচএস  ও কেয়ার হোমের বাসিন্দারাই কেবল এটি পেতে সক্ষম হবেন। ২০২১ সালে আরও বেশি স্টক উপলভ্য হওয়ার সাথে সাথে ৫০ বছরের বেশি বয়সী প্রত্যেকের ব্যাপক টিকা, পাশাপাশি প্রাক-বিদ্যমান স্বাস্থ্য অবস্থার আলোকে অল্প বয়স্ক লোকেরা টিকা গ্রহনের সুযোগ পাবেন।
ভ্যাকসিন আসতে শুরু হলে সপ্তাহে এক মিলিয়নেরও বেশি ডোজ সরবরাহ হবে। প্রায় ৫০টি হাসপাতাল স্থায়ীভাবে টিকাদানের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া ইউকে জুড়ে সম্মেলন কেন্দ্র বা স্পোর্টস স্টেডিয়ামের মতো ভেন্যুগুলিতে ভ্যাকসিন সেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে। কমিউনিটিতে জিপি ও ফার্মাসিস্টদের মাধ্যমে টিকা দেওয়ার সুযোগ থাকবে। এই ভ্যাকসিন বিনামূল্যে প্রদান করা হবে। তবে কারো জন্য এটা বাধ্যতামূলক হবে না।
ফাইজার নিশ্চিত করেছে, ভ্যাকসিনের প্রথম স্টকগুলি এনএইচএসের জন্য হবে, যা ক্লিনিকাল প্রয়োজনের ভিত্তিতে বিনামূল্যে প্রদান করবে। ২১ দিনে দুটি ইনজেকশন হিসেবে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলির বেশিরভাগই খুব হালকা, অন্য কোনও ভ্যাকসিনের পরের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলির মতো এবং সাধারণত এক দিন স্থায়ী হবে বলে মন্তব্য করেছেন হিউম্যান মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ওয়ার্কিং গ্রুপ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক স্যার মুনির পীরমোহাম্মদ। তিনি বলেন, প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি সহ সকলের জন্য এই ভ্যাকসিন ৯৫% কার্যকর।
ফাইজার/বায়োএনটেকের টিকাটির ক্ষেত্রে একেবারে ভিন্ন ধরনের একটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে যাতে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থাকে প্রশিক্ষিত করে তোলার জন্য ভাইরাসটির জেনেটিক কোড শরীরে ইনজেক্ট করা হয়। আগের পরীক্ষাগুলোতে দেখা গেছে টিকা দেওয়ার ফলে শরীরে এন্টিবডি এবং রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থার আরও একটি অংশ যা সেল নামে পরিচিত সেটিও তৈরি হয়। তিন সপ্তাহ ব্যবধানে এই টিকার দুটো ডোজ দিতে হয়।
এমএইচআর  প্রধান ডাঃ জুন রাইন বলেছেন, অনুমোদন প্রক্রিয়ায় কোন ব্যত্যয় ঘটেনি। এই ভ্যাকসিনের ব্যাচ ল্যাবগুলিতে পরীক্ষা করা হয়েছে। যাতে প্রতিটি প্রতিরোধক ভ্যাকসিনের উচ্চ মানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
এনএইচএস ইংল্যান্ডের প্রধান নির্বাহী স্যার সাইমন স্টিভেনস বলেছেন, আমাদের স্বাস্থ্য পরিষেবা  দেশের ইতিহাসের বৃহত্তম পর্যায়ের টিকা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সরকারের প্রধান চিকিত্সক উপদেষ্টা অধ্যাপক ক্রিস হুইটি বলেছেন, ভ্যাকসিনের খবরে উল্লসিত হয়ে আমরা এখনও আমাদের প্রহরীকে সরিয়ে দিতে পারি না।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, সামাজিক দূরত্ব, ফেস মাস্ক এবং স্ব-বিচ্ছিন্নতা অব্যাহত রাখতে হবে। ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করতে হলে লোকেরা এখনও সজাগ থাকতে হবে এবং নিয়ম মেনে চলতে হবে।