• ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

মৌলভীবাজারে খুতবায় ভাস্কর্য নিয়ে আলোচনা ছাত্রলীগ নেতার বাধা হাতাহাতি, ইমামের বিরুদ্ধে মামলা

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত ডিসেম্বর ১, ২০২০
মৌলভীবাজারে খুতবায় ভাস্কর্য নিয়ে আলোচনা ছাত্রলীগ নেতার বাধা হাতাহাতি, ইমামের বিরুদ্ধে মামলা

 

মৌলভীবাজার থেকে বিশেষ প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের জুড়ীতে জুমার নামাজের আগে ওয়াজ ও খুতবায় মূর্তি ও ভাস্কর্য নিয়ে আলোচনা করায় উপজেলা ছাত্রলীগ নেতার ক্ষোভ ও বাধায় পড়েন ইমাম। ওই ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা ও মুসল্লিদের মধ্যে মারামারি হয়। এমনকি ইমাম ও মুসল্লিকে আসামি করে থানায় মামলাও হয়। এই ঘটনার পর যতই সময় যাচ্ছে এখন তা ততই চাউর হয়ে স্থানীয় মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। ছাত্রলীগ নেতার এমন কর্মকাণ্ড নিয়ে নিজ এলাকাসহ পুরো উপজেলার মুসল্লিদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। মসজিদের ভেতরে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে ওই নেতা ইমামের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা ও এমন উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। জানা যায়, গত শুক্রবার জুড়ী উপজেলার পশ্চিম বাছিরপুর জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. মামুনুল হক জুমার নামাজের আগে ওয়াজে ও খুতবায় মূর্তি ও ভাস্কর্য নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনা চলাকালে উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ইকবাল ভূঁইয়া ইমামের কথায় বাধা দেন।

উত্তেজিত হয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়েন। বলেন, মূর্তি ও ভাস্কর্য এক নয়। এবং ভাস্কর্য ও মূর্তি যে এক একথাটি ইমামকে তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে। তার ওই প্রশ্নের জবাবে মসজিদের ইমাম তাকে শান্ত থাকার অনুরোধ করে নামাজ শেষে বিষয়টি তাকে কোরআন হাদিস ভিত্তিক আরো বিস্তারিতভাবে বুঝিয়ে বলবেন বলে জানান। কিন্তু তারপরও শান্ত হচ্ছিলেন না ওই উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা। হঠাৎ করে তার এমন প্রশ্ন ও ইমামের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ানো নিয়ে মুসল্লিরা একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। মসজিদের ইমাম ওই ঘটনায় নানাভাবে বুঝিয়ে সবাইকে শান্ত করে নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে বিষয়টি নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা ও মুসল্লিদের মধ্যে আবারো কথা কাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এ ঘটনায় মুসল্লিদের একজন আহতও হন। পরে ইকবাল ভূঁইয়া ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ফোন করে পুলিশকে ঘটনাস্থলে এনে ওই ইমামসহ ৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক মুসল্লি গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, মসজিদে আলোচনা চলাকালে উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ইকবাল ইমামকে নিয়ে অশালীন ভাষায় নানা কথা বলেন। এমনকি গালিগালাজও করেন। মুসল্লিগণ তার এমন অশোভন আচরণের প্রতিবাদ করেন। তারা বলেন, ইমাম কোনো দলীয় বক্তব্য কিংবা কাউকে উদ্দেশ্য করেও কিছু বলেননি। তিনি কুরআন হাদিসের আলোকে ওই বিষয়ের ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন। তারপরও ওই নেতা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে মসজিদের ভেতরেই এমন অদ্ভুত আচরণ করেন। মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. মামুনুল হক গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, জুমার আলোচনায় এমন কোনো কথা তিনি বলেননি যে কথার জেরে মারামারি হবে। তারপরও তিনি বিষয়টি দু’পক্ষের মধ্যে সমাধানের চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য তৈরি করতে যে টাকা ব্যয় হবে তা গরিবের মধ্যে বিতরণ করলে তারা উপকৃত হবেন। এমন কথাই তিনি শুধু বলেছেন। তিনি বলেন, ইকবাল ভূঁইয়া উত্তেজিত হয়ে মসজিদের ভেতরেই হৈ-হুল্লোড় শুরু করেন। তার বাবা কাইয়ূম ভূঁইয়াও তাকে অশালীন ভাষায় কথা বলেন। এই অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ইকবাল ভূঁইয়া গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ইমাম তার আলোচনায় বর্তমান সরকার গরিবের টাকা মেরে বঙ্গবন্ধুর মূর্তি তৈরি করছেন। আমি তার ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ করেছি। নামাজ শেষে এটা নিয়ে আমার কিছু ছোট ভাইদের (ছাত্রলীগ কর্মীদের) সঙ্গে কিছু মানুষের ধাক্কা-ধাক্কি হয়। জুড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ সঞ্জয় চক্রবর্তী মুঠোফোনে মানবজমিনকে বলেন, ওই ঘটনায় মসজিদের ইমামসহ ৫ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। ওই দিন মসজিদের ভেতরে ওয়াজ নিয়ে ইমাম সাহেব কি বলছেন না বলছেন এটা নিয়ে মারামারি হয়। ওই মারামারির ঘটনায় উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল ভূঁইয়া বাদী হয়ে ৫ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।