• ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

ব্রিটেন ৪০ মিলিয়ন করোনা ভ্যাকসিন নিশ্চিত করেছে

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত নভেম্বর ২৯, ২০২০
ব্রিটেন ৪০ মিলিয়ন করোনা ভ্যাকসিন নিশ্চিত করেছে

বিবিএন নিউজ ডেস্ক: পশ্চিমা দেশগলোর মধ্যে বৃটেন সম্ভবত প্রথম করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) ভ্যাকসিন অনুমোদনের জন্য প্রস্তুত। কয়েক দিনের মধ্যে এই অনুমোদনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। ৭ ডিসেম্বর বায়োএনটেক ও ফাইজারের টিকা হাতে পাওয়া যেতে পারে বলে কর্তৃপক্ষ আশা করছেন। ভ্যাকসিন প্রদানের কার্যক্রম যথাযথ ভাবে পরিচালনার জন্য বাণিজ্যমন্ত্রী নাদিম জাহাওয়ীকে ভ্যাকসিন বিষয়ক স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।

ফাইজার তাদের টিকা তৈরি করছে জার্মানির জৈবপ্রজুক্তি সংস্থা বায়ো-এনটেকের সঙ্গে। এটি ৪৪ হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে পরীক্ষামূলক ভাবে দেয়া হচ্ছে।

ইতিমধ্যে ২৯ হাজার মানুষকে দেয়া হয়ে গেছে। এর মধ্যে বয়স্ক, বিভিন্ন বর্ণ ও বিভিন্ন শারীরিক সমস্যাযুক্ত মানুষের ওপর প্রয়োগের বিষয়টি রয়েছে। এতে সব ধরনের মানুষের ওপর টিকার কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হচ্ছে।

ভ্যাকসিনের গুণমান, সুরক্ষা এবং কার্যকারিতার প্রয়োজনীয় তথ্য নিশ্চিত করার জন্য বায়োএনটেক ও ফাইজারের সর্বশেষ ডেটা মূল্যায়ন করছে বৃটেনের স্বতন্ত্র নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এটিকে পরিচালনার জন্য ১ ডিসেম্বরের মধ্যে তৈরি থাকতে বলা হয়েছে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসকে।

৪০ মিলিয়ন বা ৪ কোটি ভ্যাকসিন ডোজ অর্ডার করেছে বৃটেন। জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশের জন্য এটি যথেষ্ট মনে করছেন কর্তৃপক্ষ। আশা করা হচ্ছে এর মধ্যে ১ কোটি ডোজ এখনই পাওয়া যাবে। পর্যায়ক্রমে বাকিগুলোও এসে পৌছবে। করোনাভীত ও প্রায় অচল হয়ে পড়া অর্থনীতি থেকে মুক্তির প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে এটাকে বিবেচনা করা হচ্ছে।

প্রাথমিক তথ্য মতে ভ্যাকসিনটি করোনভাইরাস থেকে ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদেরও রক্ষা করতে ৯৪% কার্যকর এবং ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা গুরুতর ক্ষতির কারণ পরিলক্ষিত হয়নি। মেডিকেলস এন্ড হেলথ কেয়ার প্রোডাক্ট রেগুলেটরি এজেন্সি (এমএইচআরএ) এই ডেটা পর্যালোচনাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, এতে ভ্যাকসিনটির গুণমান, সুরক্ষা এবং কার্যকারিতার স্ট্যান্ডার্ড নিশ্চিত করবে।

৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্রেক্সিট কার্যকর না হওয়া অবধি ভ্যাকসিনগুলো ইউরোপীয় মেডিসিন এজেন্সি দ্বারা অনুমোদিত হবে। তবে জনসাধারণের জরুরি প্রয়োজনে বৃটেনের মেডিসিনস এন্ড হেলথ কেয়ার প্রোডাক্ট রেগুলেটরি এজেন্সি সাময়িকভাবে পণ্য অনুমোদনের ক্ষমতা রাখে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক বিকশিত ভ্যাকসিন প্রয়োগে একই প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হতে পারে। শুক্রবার, সরকার সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লিখে অ্যাস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনটি পর্যালোচনা করতে বলেছে।

ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) কর্মকর্তারা আভাস দিয়েছেন, টিকা বিতরণে জন্য হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রয়েছে। বেলজিয়ামের কারখানা থেকে এই টিকা সরাসরি নিয়ে আসা হবে বৃটেনে। আর এখানকার স্টোরেজ থেকে হাসপাতাল সমূহকে দেয়া হবে। ফাইজারের প্রধান নির্বাহী আলবার্ট বাউরলা বিশ্বের কাছে করোনার টিকা যথাসময়ে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের প্রয়াসকে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

স্বাস্থ্যকর্মী এবং কেয়ার হোমের বাসিন্দাগণ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই টিকা ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। জয়েন্ট কমিটি অন ভ্যাকেশন এন্ড ইমিউনাইজেশন (জেসিভিআই) মনে করে, কেয়ার হোমে থাকা বয়স্ক মানুষ এবং সেখানকার স্টাফদের অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। ৮০ বছরের বেশি বয়সী মানুষ দ্বিতীয় অগ্রাধিকার পাবেন। যাদের করোনায় মৃত্যুর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।

বায়োএনটেক ও ফাইজারের টিকাই হচ্ছে ব্যবহারের জন্য প্রথম লাইসেন্সযুক্ত ভ্যাকসিন। তবে টিকা নিয়ে বিস্তর ভাবতে হচ্ছে বিশেষজ্ঞদের। খুবই সাবধানতার সাথে সমন্বয় করতে হবে। কারণ এটি সংরক্ষণ করতে হবে মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তারও কম তাপমাত্রায়। পরিবহনের সময় এবং ব্যবহারের আগে শুধুমাত্র ফ্রিজে সর্বোচ্চ পাঁচ দিন রাখা যাবে।

বৃটিশ সরকার জুলাই মাসে প্রথম বায়োএনটেক ও ফাইজারের কাছে চাহিদা নিশ্চিত করেছিল, যাতে তারা জিপি, এনএইচএস হাসপাতাল এবং বিশেষ ব্যবস্থায় পরিচালিত স্থান সমূহে ভ্যাকসিনটি চালু করতে পারে। স্বাস্থ্য সচিব ম্যাট হ্যাঁকক এই সপ্তাহে সংসদ সদস্যদের বলেছেন, যদি এই ভ্যাকসিন অনুমোদিত হয় তবে এনএইচএস (NHS) যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিরাপদে তা কার্যকর করতে প্রস্তুত।

সর্বশেষ অগ্রগতি মোতাবেক আমেরিকার আগেই বৃটেনে ছাড়পত্র পাচ্ছে করোনা ভ্যাকসিন। আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন শুক্রবার জানিয়েছে, করোনা ভ্যাকসিনের ছাড়পত্র দেয়া নিয়ে আলোচনার জন্য ১০ ডিসেম্বর তাদের বৈঠক হবে।

অপরদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টিকা নিয়েও ছড়িয়ে পড়েছে নানা গুজব। টিকায় ডিএনএ পরিবর্তন ও টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে ছড়িয়েছে নানা তথ্য। এসব তথ্য নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, তথ্যগুলোর অধিকাংশই গুজব বা আংশিক সত্য।

ট্রাম্প-সমর্থক ওয়েবসাইট নিউজ ম্যাক্সের এক সংবাদদাতা সম্প্রতি তার টুইটে ফাইজার ও বায়োটেকের টিকার বিষয়ে ‘সাবধান’ থাকতে বলেন। এমারাড রবিনসন টুইটটিতে দাবি করেন, এটি (টিকা) আপনার ডিএনএ পরিবর্তন করে। ফেসবুকে আরও কিছু পোস্টে করোনার টিকা ডিএনএতে পরিবর্তন আনতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

এ নিয়ে বিবিসি তিন আলাদা বিজ্ঞানীকে জিজ্ঞাসা করেছিল। তারা বলেছেন, করোনার টিকা মানবদেহের ডিএনএতে কোনো পরিবর্তন করবে না। জেনেটিক্সের মৌলিক বিষয়ে ভুল ধারণা থেকে এ ধরনের তথ্য ছড়াচ্ছেন অনেকে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেফরি অ্যালমন্ড বলেন, আরএনএর ব্যবহার মানবকোষের ডিএনএতে কোনো পরিবর্তন আনে না। ফাইজারের মুখপাত্র অ্যান্ড্রু উইজার জানান, প্রতিষ্ঠানটির টিকা মানব শরীরের ডিএনএতে কোনো পরিবর্তন আনে না। এটি শুধু শরীরকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির নির্দেশনা দেয়।

লন্ডনের কিংস কলেজের ফার্মাসিউটিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক ড. পেনি ওয়ার্ড বলেন, অন্য টিকার মতো এর (করোনার টিকা) ক্ষেত্রেও ইনজেকশনের স্থানে ব্যথা, জ্বর, পেশিতে ব্যথা, মাথা যন্ত্রণা ও ক্লান্তির মতো স্বল্পস্থায়ী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। অধ্যাপক ওয়ার্ড আরও জানান, এ ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জ্বরের টিকা গ্রহণকারীদের ক্ষেত্রেও হয়। এগুলো খুব সাধারণ। প্যারাসিটামলের মতো ওষুধেই এগুলো সেরে যায়(।সূত্র: মানবজমিন)