• ৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১লা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

মদিনা সনদে চলবে দেশ সিলেট সমাবেশে হেফাজত আমির বাবুনগরী

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত নভেম্বর ২২, ২০২০
মদিনা সনদে চলবে দেশ সিলেট সমাবেশে হেফাজত আমির বাবুনগরী

বিবি এন নিউজ সিলেটঃ  লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মানুষের সমাগমে অনুষ্ঠিত হয়েছে সিলেট হেফাজতের বিক্ষোভ সমাবেশ। অতি নিকট অতীতে এরকম কোন সমাবেশ চোখে পড়েনি সিলেটবাসীর। সে কারণে এ সামবেশ ঘিরে ব্যাপক কৌতুহল ছিল সিলেটবাসীর। সিলেটের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট-বড় গাড়ি বহর নিয়ে সমাবেশে শরিক হতে ছুটে আসেন বিশেষ করে মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকসহ ধর্মপ্রাণ মানুষ। গোটা নগরী হয়ে উঠে মানুষে সয়লাব। সমাবেশের নির্ধারিত স্থল রেজিস্টারী মাঠে তিল ধারনের ঠাঁই হয়নি। চোখের সামনে কেবল মানুষ আর মানুষ। সমাবেশ পেশ করা হয় ৫টি প্রস্তাবনা। সেই প্রস্তাবনার সাথে একাত্মতা জানিয়ে জোর আওয়াজে সম্মতি দেন উপস্থিত তৌহিদী জনতা।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নবনির্বাচিত আমির এবং দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর শিক্ষাপরিচালক শায়খুল হাদীস আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী সরকারকে হেফাজতের কথা শোনা ও পরামর্শ নেয়ার আহবান জানিয়ে বলেছেন, তৌহিদী জনতার মনের ভাষার বোঝার চেষ্টা করুন। আমরা সরকার বিরোধী সংগঠন নই, আবার সরকার দলীয় সংগঠন নই। আমরা আপনার দুষমন নই, আমরা আপনার শক্র নই। আসলের আপনার ঘাড়ের উপর ঘাপটি মেরে যে সমস্ত নাস্তিকরা বসে আছে তারাই আপনার শক্র। এই নাস্তিক মুরতাদ কাদিয়ানীরা আপনার আত্মার শক্র। কাদিয়ানীরা শুধু ইসলামের শক্র নয়, তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার শক্র, নাস্তিকরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার শক্র।

বাবুনগরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলছেন এদেশ চলবে মদীনার সনদে। মদিনার সনদের দেশে নবীকে গালিগালাজ করা হয় কিভাবে? তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, তাহলে এটা মদীনার সনদ না শয়তানের সনদ। নাস্তিক মুরতাদ কাদিয়ানীরা যে সমস্ত কার্যক্রম করছে এটা কি মদিনার সনদ না শয়তানের সনদ? তিনি প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন রেখে বলেন, আপনি বলছেন মদিনার সনদ আমরাও আপনার সাথে আছি, আমরাও চাই মদিনার সনদে দেশ চলবে। এদেশে ভারত, আমেরিকা, চীনের সনদে নয়, এদেশ চলবে মুহাম্মদুর রাসুলল্লাহ (সা.) এর সনদে।

গতকাল শনিবার বেলা ২ টায় ঐতিহাসিক রেজিস্টারী মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা সদরে এদারা মাওলানা জিয়া উদ্দীন। সমাবেশে হেফাজতের নব নির্বাচিত আমির বাবুনগরী আরো বলেন, সমস্ত মসজিদের মুসল্লিরা হেফাজতের সদস্য, সকল মসজিদের ইমাম, মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকগণ হেফাজতের সদস্য, সকল স্কুল-কলেজের ভার্সিটির ধর্মপ্রাণ ও পরহেজগার মানুষ হেফাজতের সদস্য। নামাজ, রোজা, হজ্জ-যাকাত হলো হেফাজতের কর্মসূচী। হেফাজত বাংলাদেশে নামাজ কায়েম করতে চায়। যারা ইসলামের শত্রু, রাসূলের দুশমন; নাস্তিক- মুর্তাদের কবর রচনার জন্য হেফাজতে ইসলামের অভ্যুদয়। বিশ্বের ২ শত কোটি মুসলমানের ভালোবাসার প্রতীক রাসূল সা. এর বিরুদ্ধে ফ্রান্স সরকার ব্যঙ্গ করে, কটাক্ষ করে মুসলমানদের কলিজায় আগুন লাগিয়েছে। রাসূলের অপমানের মোকাবেলায় রক্ত সাগর ভাসিয়ে দেবে। তিনি কাদিয়ানীদেরকে কাফের ঘোষণা করে বলেন, আমি মনে করি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও ব্যক্তিগতভাবে কাদিয়ানীদেরকে মুসলিম বলে মনে করেন না। শুধু ব্যাক্তিগতভাবে কাদিয়ানীদেরকে কাফের মনে করলে হবে না। রাষ্ট্রীয়ভাবেও কাদিয়ানীদেরকে কাফের ঘোষণা করতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা হিন্দুদেরকে কাফের ঘোষণার দাবি করি না, কারণ তারা কাদিয়ানীদের মতো মুসলিম পরিভাষা ব্যবহার করে না, নিজেদেরকে মুসলিম দাবি করে না। কাদিয়ানীরা অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ন্যায় নিজেদের ধর্ম পরিচয়ে এদেশে বাস করুক, আমাদের কোন আপত্তি নেই। এই কাদিয়ানীরাই বিশ্ব নবীর বড় শত্রু। তিনি বলেন, কাদিয়ানীদের কাফের ঘোষণা না করায় তারা বাংলাদেশ থেকে মক্কা মদীনায় যাচ্ছে, নষ্ট করছে পবিত্রতা। এজন্য দায়ী বাংলাদেশ সরকার। কাদিয়ানীদের বিভিন্ন দেশে কিভাবে অতীতে কাফির ঘোষণা করা হয়েছে তারও উদাহরণ তুলে ধরেন বক্তব্যে।

ফ্রান্সে রাষ্ট্রীয় মদদে মহানবী সা. এর ব্যঙ্গ চিত্র প্রদর্শনের প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলাম সিলেটের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন, সমাবেশের অন্যতম আহ্বায়ক, ভার্থখলা মাদরাসার প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা মজদুদ্দিন আহমদ।

সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা নূর হুসাইন কাসিমী, নায়েবে আমীর প্রফেসর ড. আহমদ আবদুল কাদের, উপদেষ্টা শায়খুল হাদীস মুফতী রশিদুর রহমান ফারুক বর্ণভী, শায়খুল হাদীস উবায়দুল্লাহ ফারুক আকুনী, নায়েবে আমীর শায়খুল হাদীস নূরুল ইসলাম খান সুনামগঞ্জী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট মাওলানা আবদুর রকীব ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন।

সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, সমাবেশের অন্যতম আহ্বায়ক প্রিন্সিপাল হাফিজ মাওলানা মজদুদ্দিন আহমদ। বক্তব্য রাখেন সমাবেশের অন্যতম আহ্বায়ক মাওলানা মুহিউল ইসলাম বুরহান। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব শায়খুল হাদীস আল্লামা নূর হোসাইন কাসিমী বলেন, আমরা সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই, সংসদে অবিলম্বে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব আনতে। হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর প্রফেসর ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, বিশ্বের যে কোন স্থানে নবীর অবমাননা সহ্য করা হবে না। নবীর দুশমনদের প্রতিহত করা হবে বাংলাদেশে।

হেফাজতের উপদেষ্টা শায়খুল হাদীস আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন, মহানবী সা. এর প্রতি ভালোবাসা বিশ্ব মুসলমানের হৃদয়ে যেভাবে রয়েছে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নবী সা. এর সুন্নাত সমূহ পালন করতে হবে। কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ফ্রান্স ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে ফ্রান্স দূতাবাস থাকবে না।

সভাপতির বক্তব্যে হেফাজত নেতা জিয়া উদ্দিন বলেন, আমরা রাসূল সা. এর ভালোবাসায় জমায়েত হয়েছি। নানা প্রতিক‚লতা সত্তে¡ও আজকের সমাবেশে লাখো মানুষের জমায়েত প্রমাণ করে রাসূলের সা. এর জন্য সিলেটবাসী যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত।

সমাবেশে প্রদত্ত প্রস্থাবনা সমূহ : ফ্রান্সে ঘটনায় জাতীয় সংসদে এ অপকর্মের জন্য নিন্দা প্রস্তাব পাস, ফ্রান্স সরকার নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার পূর্ব পর্যন্ত ফ্রান্সের পণ্য বর্জন, বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ ও অপসারণ, কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলীম ঘোষণা, সিলেটে যে যে প্রতিষ্ঠান মদের বার স্থাপনে করছে তাদের প্রতি নিন্দা ও প্রতিবাদসহ এগুলো বন্ধে প্রশাসনের জোর তৎপরতা, নির্মম নির্যাতনে নিহত রায়হান হত্যাকারীদের ফাঁসি ও তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান।

এদিকে, হেফাজতে ইসলাম সিলেটের অন্যতম নেতা হাফিজ মাওলানা তাজুল ইসলাম হাসান, প্রিন্সিপাল মাওলানা সামিউর রহমান মুসা ও মাওলানা বিলাল আহমদ ইমরান, মাওলানা নজরুল ইসলামের যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, শায়খুল হাদীস মুফতী মুজিবুর রহমান, শায়খুল হাদীস মাওলানা আউলিয়া হোসাইন, মাওলানা শায়খ আবদুল বছির, মহানগর হেফাজত নেতা হাফিজ মাওলানা নূরুজ্জামান, মাওলানা খলিলুর রহমান, মাওলানা মুশাহিদ দয়ামিরী, অধ্যাপক বজলুর রহমান, জেলা হেফাজত নেতা মাওলানা ইকবাল হোসাইন, মাওলানা আহমদ বেলাল, মাওলানা গাজী রহমতুল্লাহ, হাফিজ আবদুর রহমান সিদ্দিকী, মুফতী ফয়জুল হক জালালাবাদী, মাওলানা নাসির উদ্দিন, ক্বারী মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, মাওলানা আতাউর রহমান কোম্পানিগঞ্জী, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, মাওলানা আহমদ সগীর, মওলানা ইউসুফ খাদিমানী প্রমুখ। (ইনকিলাব)