সিলেট প্রতিনিধি:সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ ও জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় হুইপ পীর ফজলুর রহমান মিসবাহকে ‘ঘটনাক্রমে এমপি’ বলেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী ও সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সাংসদ এম এ মান্নান।
মন্ত্রীর এমন বন্তব্যে জবাবে পীর মিসবাহও এমএ মান্নানকে ‘ঘটনাচক্রে মন্ত্রী’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
সোমবার বিকেলে অনলাইন ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপ জুমের মাধ্যমে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌরসভায় উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে নিজ জেলার জাতীয় পার্টির সাংসদ পীর মিসবাহ প্রতি বিষেদগার করেন এমএ মান্নান। আওয়ামী লীগের কল্যাণে মিসবাহ এমপি হয়েছেন বলেও মন্তব্য করেছেন এমএ মান্নান।
মন্ত্রীর এই বক্তব্য প্রসঙ্গে সোমবার রাতে যোগাযোগ করা হলে সাংসদ পীর ফজলুরর রহমান মিসবাহ বলেন, ‘আমি বিনাভোটে বা ঘটনাক্রমে এমপি হলে তিনি কোন তরিকায় মন্ত্রী হয়েছেন? আওয়ামী লীগ যে কৌশলে নির্বাচন করেছে, মন্ত্রী-সাংসদ নির্বাচন করেছে, একই তরিকায় একই কৌশলে মন্ত্রী এমপি হয়েছেন মান্নান সাহেব। একজন প্রবীণ ব্যক্তির কাছ থেকে এ রকম বক্তব্য মানুষ আশাহত হয়েছেন।
এরআগে জগন্নাথপুর পৌরসভায় উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এমএ মান্নান বলেন, সুনামগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নিয়ে একজন ব্যক্তি আমার বিরুদ্ধে লেগেছেন। তিনি ঘটনাক্রমে এমপি। বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন নিয়ে কোনো দিন কারো কাছে হাত পাতেননি। কোনো মন্ত্রী, সচিব বা কোনো সরকারি দপ্তরে কোনো দিন কোনো দাবি জানাননি। এখন সদরে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন দাবি তুলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব নিতে চাচ্ছেন। সুনামগঞ্জ সদরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্ধারণ নিয়ে অপরাজনীতি শুরু করেছেন। আওয়ামী লীগের কল্যাণে সুনামগঞ্জ-৪ আসন ছেড়ে দেওয়ার কারণে জাতীয় পার্টি থেকে বিনা ভোটে সাংসদ হয়ে নিজে বিশ্ববিদ্যালয় এনেছেন তা সদরের মানুষকে বুঝিয়ে বাহবা নিতে চান তিনি। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য তিনি কোনো কাজ করেননি। বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে সুনামগঞ্জের হাওরবাসীর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার।
গত ২ মার্চ মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ বিলের অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর বিলটি ৭ সেপ্টেম্বর সংসদে উত্থাপিত হয়। পরে এ-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় বিশ্ববিদ্যালয়টি দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার শান্তিগঞ্জ এলাকায় স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ পীর ফজলুর রহমান মিছবাহ সুনামগঞ্জ সদরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্ধারণের দাবিতে আন্দোলন করছেন।
সোমবারের অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান আরও বলেন, সুনামগঞ্জ জেলা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে একটি জায়গা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তাব করেছি। ওই এলাকায় সুনামগঞ্জের ২৫ লাখ মানুষের মধ্যে ২০ লাখ মানুষের সুবিধা। এ ছাড়া এতে কোনো ফসলি জমি নষ্ট হবে না। মাটির খরচ হবে কম। এসব বিবেচনায় আমরা কাজ করছি। কিন্তু তিনি (সাংসদ) বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।
জগন্নাথপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) মেহেদী হাসানের সভাপতিত্বে এই সভা হয়।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মুখে হাসি ফোটানোর লক্ষ্যে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের পিছিয়ে থাকা অঞ্চল ও জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় নিয়ে যেতে আমরা কাজ করছি। তিনি বলেন, ‘আমি হাওরের মানুষ। ছোটবেলায় দেখেছি হাওরের মানুষ বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন নিয়ে কত কষ্ট করে। তাই হাওর এলাকার জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এখন থেকে দেশে পানির সংকট থাকবে না। গ্রামে গ্রামে আমরা পানি পৌঁছে দিতে কাজ শুরু করেছি।’
বিশ্ববিদ্যলয় স্থান নিয়ে মন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে সাংসদ মিসবাহ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর উপহারকে মন্ত্রী তার নির্বাচনী এলাকায় নয়, নিজ গ্রাম ডুংরিয়ায় স্থাপন করছেন। এ জন্য মন্ত্রীর গ্রাম ছাড়া জেলার দলমত নির্বিশেষ বাকি সবাই ক্ষুব্ধ। এই জনরোষ থেকে রক্ষা পেতে মন্ত্রী আবুল-তাবুল বকছেন।