বিবি এন নিউজঃ সিলেট-ছাতক-সুনামগঞ্জ রেললাইনের ডিজাইন, ভূমি অধিগ্রহণ ও ব্যয় নির্ধারণের কাজ শুরু হবে ১৫ নভেম্বর থেকে। রেলওয়ের দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন, ছাতক থেকেই সুনামগঞ্জ পর্যন্ত রেল লাইন সম্প্রসারণের চিন্তা করছেন তারা। সার্ভে সম্পন্ন হবার পর এই বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
হাওর-বাওরের জেলা সুনামগঞ্জের উপজেলা শহর ছাতক রেল যোগাযোগের আওতায় এসেছে অনেক আগে থেকেই। ওখানকার সিমেন্ট ফ্যাক্টরীসহ অন্যান্য ফ্যাক্টরী’র মালামাল রেলে বহন করা হয়। কিন্তু জেলা শহর সুনামগঞ্জসহ জেলার বেশিরভাগ উপজেলার বাসিন্দাদের সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ কেবল সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়ক দিয়েই হয়ে আসছে। এই এক সড়ক দিয়ে যাত্রীবাহী পরিবহন, মালামাল বহনকারী ট্রাক চলাচল করছে বহুকাল থেকেই।
সুনামগঞ্জবাসী জেলা শহরকে রেল লাইনের আওতায় নেবার দাবি জানিয়ে আসছেন অনেক আগে থেকেইমানুষের দাবির প্রেক্ষিতে এবং প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় এনে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে রেল মন্ত্রণালয় সুনামগঞ্জ জেলা সদর পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার জন্য সরকারের নিকট প্রতিবেদন দাখিল করে।
সুনামগঞ্জ জেলার সামাজিক, প্রাকৃতিক, ভৌগোলিক বিস্তৃত ইতিহাস ও বিবরণ জানিয়ে এখানে রেললাইন সম্প্রসারণ অর্থনীতি ও জনসেবার আলোকে প্রয়োজনীয় উল্লেখ করে, রেল মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনায় সুপারিশ করা হয়।
জানা যায়, সুনামগঞ্জ জেলা শহরকে রেল যোগাযোগের আওতায় আনার দাবি উঠেছিল ১৯৬১ সালে। সুনামগঞ্জের সবজি, পাথর ও মাছ কম খরচে রাজধানী ঢাকায় পৌঁছানো এবং একমাত্র সড়কের বিকল্প হিসাবে রেলওয়ে লাইন চালু করণের দাবি ওঠেছিল। জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে সুনামগঞ্জ শহরের হাসননগরের বাসিন্দা তৎকালীন সিলেট ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলের সদস্য রাবেয়া লেইছ ১৯৬১ সালে প্রথম ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলের সভায় এই দাবি তুলেছিলেন।
২০১১ সালে সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির তৎকালীন সভাপতি অ্যাড. রবিউল লেইস রোকেস জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণের জন্য প্রধানমন্ত্রী বরাবরে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন।
একই বছরের ২২ ডিসেম্বর সিলেট সার্কিট হাউসে বৃহত্তর সিলেটের সংসদ সদস্য, রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় দিরাই-শাল্লার সংসদ সদস্য, আইন-বিচার সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তখনকার চেয়ারম্যান প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছিলেন, ‘সুনামগঞ্জে রেললাইন সম্প্রসারিত হবে, ছাতক-সুনামগঞ্জ এবং মোহনগঞ্জ-ধরমপাশা রেললাইন স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। এটা হলে হাওরের মানুষের যোগাযোগ বিড়ম্বনা অনেকটাই কমে যাবে।’
রোববার এই প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত রেলওয়ের অতিরিক্তি প্রধান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন এ প্রতিবেদককে জানান, সিলেট-ছাতক-সুনামগঞ্জ রেললাইনের ডিজাইন, ভূমি অধিগ্রহণ ও ব্যয় নির্ধারণের কাজ করার জন্য গত জুলাই মাসে কনসালটেন্ট নিয়োগ হয়েছে। করোনা ও বন্যার কারণে কনসালটেন্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সার্ভের কাজ শুর করতে বিলম্ব হয়েছে। ১৫ নভেম্বর থেকে সার্ভের কাজ শুরু হবে। যেহেতু ছাতক পর্যন্ত রেল লাইন রয়েছে, আমাদের প্রাথমিক চিন্তা হচ্ছে ছাতক শহর থেকেই সুনামগঞ্জ পর্যন্ত রেল লাইন সম্প্রসারণ করার। সার্ভে সম্পন্ন হবার পরই এই বিষয়টি চূড়ান্ত করতে হবে।