• ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৩শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

শিশু হাসপাতালের গবেষণা:৮৩ নবজাতকের ২৬ জনই করোনা আক্রান্ত

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত নভেম্বর ৬, ২০২০
শিশু হাসপাতালের গবেষণা:৮৩ নবজাতকের ২৬ জনই করোনা আক্রান্ত

 

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ:দেশে নবজাতকদের মধ্যেও করোনা সংক্রমণ হচ্ছে। এক গবেষণায় এমন তথ্যই উঠে এসেছে। ৮৩টি নবজাতকের নমুনা পরীক্ষা করে ২৬ জনের শরীরে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিশ্চিত হয়েছেন গবেষকরা। এদের সর্বোচ্চ বয়স ছিল ৮ দিন। এসব নবজাতককে কোভিড-১৯ সংক্রমণের আশঙ্কায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি। এদের মধ্যে ১১ জনকে নানারকম মারাত্মক অসংক্রামক রোগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দু’জনকে ভর্তি করা হয় নিউমোনিয়া থাকার কারণে। গবেষণায় দেখা যায়, করোনায় নবজাতকদের মৃত্যুর হার ৭ শতাংশেরও বেশি।

অথচ সরকারি হিসাবে করোনায় শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে শিশুর মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক ৪৮ শতাংশ। যৌথভাবে এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছে চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন (সিএইচআরএফ) ও ঢাকা শিশু হাসপাতাল।
সমপ্রতি একটি আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা থেকে দেখা যায়, সংক্রমিত নবজাতকদের ওপর কোভিড-১৯-এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব বিশ্লেষণের জন্য ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সে করা হয়েছে। একইসঙ্গে নবজাতকদের মায়েদের কোভিড-১৯ নমুনাও পরীক্ষা করে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয়েছে। করোনা সংক্রমিত ২৩টি নবজাতকের মধ্যে ১২টি শারীরিকভাবে সুস্থ ছিল, ৮ জন মারা যায়, ৩ জন এখনো চিকিৎসাধীন। যে ৮টি নবজাতক মৃত্যুবরণ করে, তাদের মধ্যে দুই জনের মৃত্যু হয় কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমিত হওয়ার কারণে। বাকি ৬টি নবজাতকের নানা ধরনের কো-মরবিডিটি ছিল। ঢাকা শিশু হাসপাতালে পরবর্তী সময়ে তাদের চিকিৎসা বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত এবং এক্স-রে ও অন্যান্য ল্যাবরেটরি রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ করা হয়। এক্ষেত্রে রোগীদের ২৭ থেকে ৭৫ দিন পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করা হয়। এ সময় নবজাতকদের অভিভাবক ও তাদের ৯ জন পরিচর্যাকারীর নমুনা পরীক্ষা করে ৮ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া গেছে।
করোনা পজেটিভ নবজাতকদের মধ্যে ১২ জনের বয়স ৮ দিন (৪৭ শতাংশ) ও ১৪ জনের বয়স ছিল ৫ দিন। এই নবজাতকদের হাসপাতালে ভর্তি সময়ে গড় ওজন ছিল ২ দশমিক ৯ কেজি। ২৮শে জুলাই পর্যন্ত কেস ফলোআপ করা হয়। ২০ জন মায়ের সাক্ষাৎকার নিয়ে জানা যায়, তাদের মাঝে ৬ জনের কোভিড-১৯ উপসর্গ ছিল শিশু জন্মদানের আগে। গবেষণার অধীনে রাজধানীর শিশু হাসপাতালে ২৯শে মার্চ থেকে ১লা জুলাই পর্যন্ত যে নবজাতকরা চিকিৎসা নেয়ার জন্য ভর্তি হয়েছিল, কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের জন্য তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাইল্ড হেল্‌থ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (সিএইচআরএফ) নির্বাহী পরিচালক ড. সমীর কুমার সাহা বলেন, বাংলাদেশে নবজাতকদের মাঝে কোভিড-১১ সংক্রমণের এমন চিত্র পাওয়া যাবে এমনটি আমরা চিন্তা করিনি। ধারণা করা হচ্ছিল, শিশু, বিশেষ করে নবজাতকদের (১ থেকে ২৮ দিন বয়স) মধ্যে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের সম্ভাবনা কম। কিন্তু বর্তমানে আমরা বাচ্চাদের মধ্যেও প্রচুর পরিমাণে জটিলতা পাচ্ছি। তবে এটা নবজাতকদের মধ্যে অনেক কম হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে অবশ্য একটি বিষয় উল্লেখ করার মতো যেসব নবজাতককে নিয়ে এই গবেষণাটি করা হয়েছে, তারা শিশু হাসপাতালে এসেছিল কিন্তু ভিন্ন কারণে। তিনি বলেন, এই গবেষণার আওতায় যেসব নবজাতক ছিল, তাদের মধ্যে মাত্র দুইজনের শরীরে করোনার উপসর্গ ছিল। নবজাতকদের ক্ষেত্রে আমরা যদি খেয়াল করি, তাদের বয়স কিন্তু ছিল অল্প মাত্র কয়েকদিন। পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত এমন কিছু পাওয়া যায়নি যে, ভার্টিক্যাল ট্রান্সমিশন হয়েছে। ভার্টিক্যাল ট্রান্সমিশন হচ্ছে এমন একটি বিষয়, যেখানে গর্ভবতী মায়ের কাছ থেকে সন্তান প্রসবের মুহূর্তে বাচ্চার মাঝে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকা। এমন কোনো কিছু কিন্তু আমরা এখনো পাইনি। আমাদের দেশের বাইরেও এখন পর্যন্ত তেমন কেউ এই ভার্টিক্যাল ট্রান্সমিশন পায়নি। শিশু হাসপাতালে কিন্তু কোনো বাচ্চার ডেলিভারি হয়নি। তাই এক্ষেত্রে আমরা এই ভার্টিক্যাল ট্রান্সমিশনটি বোঝার বিষয়টি খুবই কম হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, আমরা যখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাবধান থাকি, তখন আমরা মাস্ক পরি। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এমন অনেক স্থান আছে যেখানে সন্তান ডেলিভারির স্থান তেমন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে না। অনেক স্থানে দেখা যায় একের পর এক ডেলিভারি একই স্থানে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে বাসায় ডেলিভারি হয়ে থাকে, যেখানে ধাত্রীরা প্রসব করিয়ে থাকেন। সেসব স্থানেও অধিকাংশ সময়ে আসলে অনেক ক্ষেত্রেই সচেতনতার অভাবে কোভিড-১৯ বিষয়ক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হয় না। এ কারণেও দেখা যাচ্ছে, বাচ্চাদের মধ্যে সংক্রমণটা আসছে। যেটা তাদের নাকের মধ্যে থেকে যাচ্ছে। কিন্তু অন্য কোনো কিছু করছে না। এটা একটা বিষয়। তিনি আরো বলেন, আরেকটি বিষয় হলো আমরা দুইটি বাচ্চাকে পেয়েছি যেখানে আমরা পরিষ্কারভাবে দেখতে পাচ্ছি যে ভাইরাস তাদের ফুসফুসে গিয়ে সংক্রমণ করেছে। এটা আমাদের সিরিজ আকারে কাজ হয়েছে, যা আগেও প্রকাশিত হয়েছে। চীনে এ বিষয়ে গবেষণা হয়েছে ফেব্রুয়ারি থেকে। আমাদের এখানে কাজ কিছুটা দেরিতে শুরু হলেও আমরা এপ্রিল মে থেকেই কাজ করেছি। আমরা নবজাতকদের মায়েদের কাছ থেকে ও নবজাতকদের যারা দেখাশোনা করেছে, তাদের নমুনা সংগ্রহ করেছি। সেক্ষেত্রে আমরা তাদের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পেয়েছি, কিন্তু তারা উপসর্গহীন ছিল। এক্ষেত্রে আমরা ধারণা করছি মা যখন নবজাতককে নিয়ে আসছেন বা শিশুকে ক্যারি করছেন, তাদের কাছ থেকে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে বাচ্চার মধ্যে।(দৈনিক মানবজমিন )