বিবি এন নিউজ সিলেটঃ সিলেট বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে নিহত রায়হান উদ্দিনের (৩০) মায়ের অনশন ভাঙালেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। ছেলে হত্যার বিচারের দাবিতে রোববার টানা ছয়ঘন্টা অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়লে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র এসে রায়হানের মা ছালমা বেগমকে পানীয় পান করে অনশন ভঙ্গ করান।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ছেলের হত্যার বিচার চেয়ে রোববার বেলা ১১টার দিকে অনশন বসেন পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে নিহত মো. রায়হান আহমদের মা ছালমা বেগম। তার সাথে পরিবারের সদস্যরাও একাত্ম হন। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ছালমা অসুস্থতা বোধ করেন। খবর পেয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, রায়হানের এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর মখলিছুর রহমানসহ সিটি করপোরেশনের অন্যান্য ওয়ার্ড কাউন্সিলর এসে ছালমা বেগমকে পানীয় পান করে অনশন ভঙ্গ করান।
এর আগে অনশন চলাকালে বন্দরবাজার ফাঁড়ির সামনে সিলেট নগরীর কেন্দ্রস্থলের প্রধান সড়ক অবরোধ করে রাখেন রায়হানের মায়ের অনশনে সংহতি প্রকাশ করা লোকজন।
ছালমা বেগমকে পানীয় পান করে চিকিৎসকের কাছে পাঠন সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘পুলিশ ফাঁড়িটি নগর ভবনের পাশেই। সকাল থেকে রায়হনের মা অনশন করছেন। অথচ তাঁকে পুলিশ কিংবা পিবিআই কেউ এসে কোনো আশ্বাস দিচ্ছে না। আমি ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নিয়ে এই মাকে আশ্বস্ত করেছি যে নগরের একজন সেবক হিসেবে তার দাবির সাথে আমরা সবাই একাত্ম।’ মেয়র বলেন, মায়ের মন, তাই তিনি পাগলপারা। ঘটনার দুই সপ্তাহ পরও প্রধান অভিযুক্ত গ্রেপ্তার না হওয়াটা আসলেই একটি খারাপ বার্তা। এই শহরকে শান্ত রাখতে হলে অবশ্যই পলাতক আকবরসহ সবাইকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা উচিত।
অসুস্থ অবস্থায় রায়হানের মা বলেছেন, ‘ছেলেকে হত্যার পর থেকে এমনিতেই আমি স্বাভাবিক নই, খাওয়া থেকে শুরু করে ঘুম পর্যন্ত নেই। দলমত–নির্বিশেষ দাবি জানাচ্ছে নির্যাতনের মূল হোতা বরখাস্ত এসআই আকবরকে গ্রেপ্তার করার। কিন্তু আকবরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। এই দুঃখে আমি আজ সকালে এক গ্লাস পানি খেয়ে অনশনে বসেছিলাম। শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনশন ভাঙলেও আমার অনশন চলবে বিচার না হওয়া পর্যন্ত।
সিলেট নগরীর একটি রোগনির্ণয় কেন্দ্রে চাকরি করতেন রায়হান। স্ত্রী, আড়াই মাস বয়সী এক মেয়ে, মাসহ যৌথ পরিবার নিয়ে তিনি আখালিয়ার নিহারিপাড়ার বসবাস করতেন। ১০ অক্টোবর দিবাগত রাত তিনটার দিকে রায়হানকে সিলেট কোতোয়ালি থানার বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনে রায়হান মারা যান। এ ঘটনায় তার স্ত্রী তাহমিনা আক্তার পরদিন ১১ অক্টোবর হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন।