• ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

রাজন থেকে রায়হান হত্যাকান্ড : প্রাপ্তি এবং প্রত্যাশা

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত অক্টোবর ২০, ২০২০
রাজন থেকে রায়হান হত্যাকান্ড : প্রাপ্তি এবং প্রত্যাশা

এ এম সমুজ গ্রেটার মানচেষ্টার লন্ডনঃ   হত্যা, খুন, ধর্ষণ যে কোন সমাজের জন্য অশনিসংকেত।  এ কাজ গুলো বর্বর, ঘৃনিত হওয়া সত্ত্বেও হর হামেশা ঘটতে থাকে। কাউকে খুন কিংবা হত্যা করার অর্থই হলো তার জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দেয়া। স্বাভাবিক মৃত্যু থেকে তাকে বঞ্চিত করা। তার মা ভাই বোনের কাছ থেকে সময়ের আগে জোর পুর্বক কেড়ে নেয়া। সব অপরাধের বড় অপরাধ হলো খুন। এটি সব দেশে, সব সমাজে ঘৃনিত একটি অপরাধ। তাই তার সাজা ও অনেক বড়।

বাংলাদেশে এই অপরাধের সাজা মৃত্যুদন্ড। আদালত কতৃক অপরাধী দোষী সাব্যবস্ত হলে তার ফাঁসির হুকুম হয়। বর্তমান সরকারের আমলে উল্লেখযোগ্য ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে যা দেশের ইতিহাসে বিরল। যদি ও এ সব ফাঁসি কার্যকর নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক রয়েছে বিস্তর। সরকার চাইলে যে কোন অপরাধীর ফাঁসি কার্যকর করতে পারে এটা মোটামুটি সবার জানা। কোন অপরাধের যদি বিচার না হয় তাহলে সে-ই অপরাধ বাড়তেই থাকে।

শিশু সামিউল ইসলাম রাজন হত্যা ছিলো সিলেটের অপরাধ জগতের ঘৃনিত একটি হত্যাকান্ড। খুটির সাথে বেধে প্রকাশ্য দিবালোকে তিলে তিলে পিটিয়ে  থাকে হত্যা করা হয়েছিল। সে দিন রাজন অনেক কেঁদেছে, হাতে পায়ে ধরেছে কিন্তু কাজ হয় নি। পাষন্ড কামরুল তাকে বাচতে দেয় নি!   মেরেই ফেললো। সেই রাজন হত্যার বিচার কি আজো হয়েছে?  হ্যা হয়েছে, চারজনের ফাঁসি হয়েছে। আদালতের রায়ে, রায় লিখা আছে,  খবরের কাগজে প্রকাশিত হয়েছে, ব্যাস এতটুকুই।

ফাঁসির দন্ড প্রাপ্ত আসামীর যদি ফাঁসি না হয়, রায় দেয়ার পর যদি ঝুলিয়ে রাখা হয় বছরের পর বছর তাহলে এ রায় অর্থহীন। আইন, আদালত, এবং বিচার ব্যবস্হার উপর মানুষের বিশ্বাস উঠে যায়।

বিশ্বাসের জায়গায় যদি সংশয় তৈরী হয় তখন সমাজের অপরাধ দমন করা কঠিন। শিশু রাজন হত্যার ফাঁসি যদি কার্যকর হতো, তাহলে কি রায়হান কে পিটিয়ে হত্যা করার মতো দুঃসাহস পুলিশের হতো?  মাত্র ১৭ কার্যদিবসে রাজন হত্যার বিচারে ফাঁসির  রায় হলে ও দির্গ ৬ বছর হতে চললো এখন ও ফাঁসি কার্যকর হয় নি?

প্রতিটি খুনের বিচারের জন্য মানুষকে রাস্তায় নামতে হয়, প্রতিবাদ করতে হয়, কিন্তু কেন? রাষ্ট্র তার দায় থেকে তো এর বিচার করার কথা। এর জন্য মানুষের মিছিল মিটিং করতে হবে কেন?

ভোক্ত ভোগীরা বিচারের জন্য ধারে ধারে ঘুরে। এক সময় যদি বিচারের  রায় হয় তবে তা কার্যকর হয় না। বিচার দির্গায়িত হওয়ায় আইনের মারপ্যাচে অপরাধীরা বেরিয়ে যায়। বিচারহিনতার এই সংস্কৃতি থেকে আমরা কবে মুক্তি পাবো?

রাজনের পরিবার তো অন্তত একটা রায় পেয়েছে, রায়হানের পরিবার কি রায় পাবে? রায়হানের দু মাসের শিশু বাচ্চা কি তার পিতা হত্যার বিচার পাবে?  এই প্রশ্ন রাষ্ট্রের কাছে, এই প্রশ্ন আদালতের কাছে। জনগনের ন্যায় বিচার পাবার প্রত্যাশা অনেক থাকলে ও প্রাপ্তির ঝুড়িতে শুন্যই থাকে।

লেখকঃ কলামিষ্ট ও গনমাধ্যম কর্মী।