আব্দুল কাদের তাপাদার: রাতের ঝিঝি পোকারা ক্লান্ত হয়ে পড়তো।
কিন্তু আমাদের মেধা আর শ্রমের সাধনায়
তখনো কোনো ক্লান্তি ছিল না।
অফিসের সবাই কাজ সেরে বিদায় নিতে পারলেও
আমরা দুজন রাতের অসীম গভীরতা ভেদ
করে পরের দিনের দৈনিকের চেহারাটার
প্রসববেদনার কাতরতার এক প্রাচুর্যভরা অনুভূতির
মাঝে হারিয়ে যেতাম।এভাবেই রাতের আঁধার পেরিয়ে ভোরের আলো ফুটতো।
কখনো কখনো আকাশ ভাঙা বর্ষণ, ঝড়-ঝঞ্ঝার ভয়ানক রাত
কাটতো শহরের নির্জন রাজপথে।বাসায় ফেরার পর মনে হতো একটা নতুন জীবন ফিরে পেলাম।
আমার আর আজিজুল হক মানিকের
যৌবনের এ এক নিয়তির খেলা।
২০০৯ এর দিকে দৈনিক জালালাবাদের চরম আর্থিক
সংকটের দিনে ব্যর্থতার দায় নিয়ে বিদায় নিলেন
সম্পাদক। ব্যবস্হাপনা সম্পাদক মানিক ভাই
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পেলেন। আমি নির্বাহী
সম্পাদক ও বার্তা সম্পাদক।
এরপরই মানিক ভাই স্ট্রোক করে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন।
প্রিন্টার্স লাইনে মানিক ভাইয়ের নাম ছাপা হলেও
২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত আমি দায়িত্ব পালন করে গেলাম।গাধার মতো খাটুনি। আত্মীয় স্বজনের জানাজা
এমনকি বিয়ে শাদীতেও যেতে পারতাম না।
আমার যে মহান দায়িত্ব!! আমার মরহুম আম্মা বলতেন,চাকরিটা ছেড়ে দে,জীবনটা শেষ করিস না।
আমি বলতাম,দৈনিক জালালাবাদ টা আমার
সন্তানের মতো। একে আমরাই জীবন দিয়ে গড়ে তুলেছি।
এ সময় রিপোর্টিংএ দৈনিক জালালাবাদে এক সোনালী যুগের সূচনা হয়।
সারা বাংলাদেশে আমরা জাতীয়ভাবে পাঁচবার
শ্রেষ্ঠ পুরস্কারে ভূষিত হই।
এ সময়ে আমাদের পাশেই আরেকটি দৈনিক খুলেন
আগের সম্পাদক। জালালাবাদের বিরুদ্ধে নানা কথা
কানে ভেসে আসে।
এর আগে মাঝে একবার পূর্ববর্তী সম্পাদক ব্যবস্হাপনা পরিচালক হিসেবে এলেন। আমার পদবী
খেয়ে ফেল্লেন।সেদিনও আমি ছিলাম অসীম ধৈর্য নিয়ে।
মাত্র ১ বছরে তিনি আবার বিদায় হয়ে গেলেন চরমভাবে ব্যর্থ হয়ে।
আমার যৌবনে রাত বিরাতের সাথী মানিক ভাইয়ের জীবন এখন সংকটাপন্ন। তিনি এতটাই গুরুতর অসুস্থ
যে কাউকে চিনেন না।শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে
থাকিয়ে থাকেন। তাকে দেখে চেনাই মুশকিল।
কে এই আজিজুল হক মানিক। এই মানিকই
কৈশোরে মদনমোহন কলেজ মাতিয়েছেন।
ছাত্র সংসদের নির্বাচিত জিএস ছিলেন।
জাতীয় টিভি বিতর্কে যিনি দেশ মাতিয়াছেন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হিসেবে জনপ্রিয়তা
অর্জন করেছেন।
নগরীর মর্যাদাপূর্ণ ১নং দরগামহল্লা ওয়ার্ডের
নির্বাচিত কাউন্সিলর হিসেবে নগরবাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
এক প্রাণবন্ত,আড্ডাবাজ অসাধারণ মেধাবী
আমাদের মানিক ভাই এখন বাসায় এক কোণে
অবুঝ শিশুর মতো দিবানিশি পার করেন।
স্ত্রী, সন্তান আর পরিবারের লোকজন ছাড়া
কেউ তার খবর নেয় না।
যারা তাকে ব্যবহার করে এই শহরে রাজনীতির
মাঠ গরম করতেন, সাংবাদিকতায় কাজে লাগিয়ে
নিজেদের উদ্ধার করতেন।আজিজুল মানিক না হলে
অনেক কিছুই হতো না।আজ তারা কোথায়?
একটাবারও খোঁজ নেয়ার সময় হয় না তাদের?
তার চিকিৎসা খরচ ব্যয়বহুল।কিভাবে তা ম্যানেজ হয়
আমরা তা জানি না।তিনি কিভাবে বেঁচে
আছেন, তাও জানবার প্রয়োজন কারো নেই!!
এদের মুখে ইনসাফ, ইসলামী সমাজ কায়েমের শ্লোগান
শুনলে পাগলেও হাসে আজকাল!!
মানিক ভাইকে দেখতে গিয়ে
মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে পড়লো।
আল্লাহর কাছে দোয়া করি,হে মাবুদ
তুমি মানিক ভাইকে শেফায়ে কামেলা
দান করো।
লেখক:সাংবাদিক , কলামিস্ট ।
সাবেক নির্বাহী সম্পাদক,
দৈনিক জালালাবাদ।
সম্পাদকঃএখন সময় ,
পায়রা আবাসিক এলাকা
দরগামহল্লা
সিলেট।
১৪.১০.২০২০