সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:: সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলী ইউনিয়নের জীবন দাস নামক এক লম্পটের জৈবিক লালসার রোষানলে পড়ে সংসার জীবন বিষময় হয়ে উঠেছে রীতা রাণী দাস নামের এক অসহায় দরিদ্র নারীর।
রীতা রাণীর বাড়ী সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলী ইউনিয়নের রাজাপুর-বাগহাটী গ্রামে। এটা তার পৈতৃক বাড়ী। প্রায় ১৫ বছর আগে তার বিয়ে হয় দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার সেচনী গ্রামের চরিত্র দাসের সাথে। স্বামীর সংসার দারিদ্রতায় আবৃত থাকায় রীতাও উপার্জনের তাগিদে বিত্তশালীদের গৃহস্থালি কাজে নিয়োজিত হন।
গেল দু’বছর আগে স্বামী সন্তান নিয়ে চলে আসেন পিত্রালয়ে। কিছু দিন পিতৃগৃহে থাকায় পর পিত্রালয়ের সহযোগিতায় নিজস্ব এক খন্ড জায়গা কিনে মাথা গুজার ঠাঁই করেন। বাঁধেন টিনশেডের দোচালা একখানা ঘর।কিন্তু এমনতর কষ্টার্জিত জীবন যাপনে বাদ সাধে একই গ্রামের কামুক মদন মোহন জীবন দাস। সে রাজাপুর-বাগহাটীর যতীন্দ্র দাসের ছেলে। প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক গড়ার জন্য দু’বছর ধরে আঠার মতো লেগে থাকে রীতার পিছু পিছু। রীতা পরের বাসাবাড়ীতে কাজ করে অতি কষ্টে সংসারে আর্থিক যোগান দেন।
এতে কৌশলে জীবন দাস রীতার ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে অবিরাম ফোন করে নানা রকম কুপ্রস্তাাব দিতে থাকে। এতে রীতা কোন সাড়া দিয়ে এরকম আচরণের প্রতিবাদ জানালে জীবন দাস আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। অন্যের বাড়ীতে গৃহস্থালি কাজ শেষে স্বামী- সন্তানের কাছে বাড়ীতে এলেই জীবন দাস সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে হানা দেয় রীতার ঘরে। ঘরের দরজা ধরে টানাটানি করে এবং বেড়া ভাংচুর করে। এব্যাপারে অতিষ্ঠ হয়ে রীতা গ্রামের লোকদের বিষয়টি অবগত করে লম্পট জীবনের কামাতুর লোলুপতার রোষানল থেকে পরিত্রাণ চান।
কয়েকবার গ্রামে শালিস বসে, কোন সমাধান হয় না। এক পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট বেহেলী ইউপি চেয়ারম্যান অসীম কুমার তালুকদারকে বিষয়টি অবগত করে এব্যাপারে সহযোগিতায় করতে অনুনয় বিনয় করেন রীতা। এক শালিস বৈঠকে চেয়ারম্যান অসীম তালুকদার উপস্থিত থেকে গ্রামবাসী শালিসানদের ও জীবন দাসের স্বাক্ষর নেন সাদা কাগজে। আশ্বাস দেন জীবন দাসের অঙ্গীকার নাম্বা নিয়ে বিষয়টির সুরাহা করার।
কিন্তু রহস্যজনক কারণে অদ্যাবধি সাদা কাগজে কিছুই লেখা হলো না। কোন সুরাহা হলো না। আর এতে প্রশ্রয় পেয়ে আরো বেপরোয়া হয়ে হয়ে উঠে বখাটে জীবন দাস। ক্রমাগত বাড়তেই থাকে রীতাসহ তার পরিবারের উপর নানা রকম উৎপাত-নির্যাতন। শারীরিক সম্পর্কে না জড়ালে রীতাসহ তার স্বামী- সন্তানকে খুন করবে বলে কামুক জীবন দাস হুমকি দেয় রীতাকে। এতে আরো ভীত হয়ে পড়েন রীতা।
অভিযোগের ভিত্তিতে সরজমিন গেলে রীতা রানী দাস এসব কথা বলেন। পরে উপায়ান্তর না দেখে গত ০৬ সেপ্টেম্বর”২০২০ইং জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন বলে রীতা রাণী দাস জানিয়েছেন। এসময় তিনি ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে কান্নাজড়িত ভাবে প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এব্যাপারে গ্রামেরই একাধিক শালিস ব্যক্তির কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, এরকম অশ্লীল আচরণের প্রতিবাদে গ্রামে পর পর কয়েকবার শালিস হয়েছে। প্রথমবার শালিসে জীবন দাস তার দোষ স্বীকার করে আর এরকম কাজ করবে না বলে অঙ্গীকার করে ৫হাজার টাকা শালিসি জরিমানাও দিয়েছে। এনিয়ে আরো কয়েকবার শালিস বিচার হয়েছে। তার পরেও একই জঘন্য কাজ সে বার বার করে আসছে। জীবন দাসের আত্মীয়-স্বজন সম্পর্কিত এরকম একদল উঠতি যুবক সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে এসব অপরাধ সংগঠিত করে আসছে।এই লাঠিয়াল বাহিনীরা গ্রামের মুরুব্বি মানে না, শালিস মানে না, শালিসেও লাঠিসোটা নিয়ে শালিসানদের উপর চড়াও হয়। শালিসেও জীবন দাসের পক্ষ নিয়ে একদল উৎসাহিত করে। এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি হয়ে উঠেছে।
লিখিত অভিযোগের বিষয়ে জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিৎ দেব বলেন, অভিযোগটি তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় প্রেরণ করেছি। তদন্ত রিপোর্ট পেলে পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা জামালগঞ্জ থানার এসআই সোহাগ সরকার বলেন, অভিযোগটির এখনও তদন্ত চলছে.।