মো: রেজাউল করিম মৃধা ॥ শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড । জ্ঞান অর্জনের জন্য সুদূর চীনে যাওয়ার কথা আমাদের সবার জানা। শিক্ষার জন্য দেশ থেকে প্রবাসে আসতে চায় হাজারো মেধাবী ছাত্র/ছাত্রী। কিন্তু সবার ভাগ্যে সেই সুযোগ হয়ে উঠে না। উচ্চ শিক্ষার জন্য যারা বিদেশে বিশেষ করে আমেরিকা, ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মধ্যপ্রাচ্য সহ বিভিন্ন দেশেই রয়েছে বাংলাদেশের হাজার হাজার মেধাবী শিক্ষার্থী।
কেউ কেউ লেখাপড়া শেষ করে দেশে ফিরে গিয়ে নিজের মেধা বা যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়েছেন আবার কেউ বিদেশে বা প্রবাসে নিজের যোগ্যতা বলে স্থায়ীভাবে জীবন শুরু করেছেন। পরবর্তীতে নিজের স্ত্রী, পুত্র, কন্যা বা পরিবার এবং আত্বীয় স্বজন নিয়ে বসবাস করছেন। নিজের চেয়ে সন্তানদের ভবিষ্যতকে আরো উজ্জল করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে সন্তানদেরকে নিয়ে গিয়েছেন আরো উপরে।
তেমনি একটি পরিবারে বাবা বাংলাদেশ থেকে উচ্চ শিক্ষার জন্য এসেছিলেন ব্রিটেনে। কিন্তু আর ফিরে যাওয়া হয়নি নিজের মাতৃভূমিতে। যদিও দেশের সবার সাথে রয়েছে সুসম্পর্ক, মাঝেমধ্যেই দেশে বেড়াতে যান কিন্তু স্থায়ীভাবে আর থাকা হয়ে উঠে নাই।
আমি বলছিলাম, তিন পুত্র সন্তানের বাবা লন্ডনের পাশে রেইনহ্যামে বাসিন্দা মন্জুরুল হায়াতের কথা। সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা তিনি এবং তার স্ত্রী। তাদের বড় ছেলে তৌফিক হায়াৎ, ইলফোর্ড কাউন্ট্রি গ্রামার স্কুল থেকে এ লেভেল করে এখন বিজনেসের উপর ডিগ্রী করছেন। আর ছোট ছেলে এখনো ছোট।
তাদের মেঝো ছেলে সৌমিক হায়াৎ। হর্নচার্চ হাই স্কুল থেকে এবার জিসিএসই করেছেন। এই সাধারন হাই স্কুলের ছাত্র সৌমিক হায়াৎ তার মেধা এবং যোগ্যতা দিয়েই ইটনের মত বিশ্বখ্যাত কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ করে নিলেন।
হর্নচার্চ স্কুলের এই প্রথম কোন ছাত্র ইটন কলেজে ভর্তি হওয়ার গৌরব অর্জন করে। আর সেই গৌরব অর্জনকারী হচ্ছে বাংলাদেশের সিলেটের সন্তান। সৌমিককে নিয়ে তার বাবা, মা, ভাই যেমন গর্বিত তেমনি গর্বিত পুরো বাংলাদেশ।
এক‘শ হাজার পাউন্ড স্কলারশীপ নিয়ে বিশ্বখ্যাত ইটন কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে ব্রিটিশ বাংলাদেশী মেধাবী তরুন সৌমিক হায়াত।
প্রিন্স উইলিয়ামস, প্রিন্স হ্যারি, ব্রিটেনের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনসহ সাবেক ১৯ জন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী এই ইটনে পড়ালেখা করেছেন। চলতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১২০০ আবেদনের বিপরিতে মোট ১২জন ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন । এর মধ্যে সৌমিক হচ্ছেন সেই ভাগ্যবান।
অদম্য এই বাংলার কৃতি সন্তান একদিন বৃটেনের হতে পারে প্রধানমন্ত্রী কিম্বা উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা বা দিকনির্দেশক। অবাক হচ্ছেন? অবাক হওয়ার কিছু নেই। তার ভিতরের প্রতিভাটি আলোকিত হলে এটা অতি সহজ কেননা এই কলেজ হচ্ছে নেতা তৈরির কলেজ। বৃটেনের ১৯ জন প্রধানমন্ত্রী তৈরি করেছে এই কলেজ।
ইটনে কলেজে ভর্তি হওয়া সম্পর্কে সৌমিকের মা আবেগ আপ্লুতো হয়ে বললেন, “ইটনে আমার ছেলে চান্স পাবে এটা ছিলে আমাদের স্বপ্ন । সেই স্বপ্ন পূরনের জন্য প্রয়োজনে আমাদের বাড়ী বিক্রি করে দিবো তবু চান্স পেলে ইটনে পড়াবো। সেই আশা পূর্ন হয়েছে ওর মেধার জন্য পূর্ন স্কলারশীপ পেয়েছে এটা আমাদের জন্য আরো আনন্দের। সবার কাছে দোয়া চান সৌমিকের মা হাফসা খাতুন। তিনি আরো বলেন, “সৌমিক শুধু লেখাপড়া করে নয় সব মিলিয়ে যেন এক জন ভালো মানুষ হতে পারে। সেই দোওয়া চাই,”।
সৌমিক তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “আমি এলিটদের সাথে লেখাপড়া করবো। অনেক উচ্চধনী কিম্বা রাজ পরিবারের সন্তানদের সাথে একই হোস্টেলে থাকতে হবে। তাদের সাথে প্রতিযোগিতা করেই আমাকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। হয়তো আমার এ্যাম্বিশন অনেক উঁচু সেই উঁচু থেকে আরো উঁচু হবে তবু আমি আমার অতীতকে ভুলে যাবো না। আমি আমার ছোট বেলার বন্ধুদের কথা ভুলে যাবো না । দেশের জন্য কিছু করতে পারলে সেটাই হবে আমার স্বার্থকতা”।(ব্রিট বাংলা)