• ১৮ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৪ঠা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২২শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

তালেবানদের ভয়ে আফগান ছাড়ছে আফগানিরা

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত আগস্ট ৩১, ২০২১
তালেবানদের ভয়ে আফগান ছাড়ছে আফগানিরা

বিবিএন নিউজঃ আফগানিস্তানে সাধারণ মানুষের মাঝে ভয় আর শংকা কাটছেনা। দিন দিন যেন এ শংকা আরো বাড়ছে। এ দিকে কাবুলে পরপর বোমা হামলার পর সাধারন মানুষ দেশ ছেড়ে পাকিস্তানের দিকে ছুটছে।  যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা আফগানিস্তান ত্যাগের মধ্য দিয়ে ‘স্বাধীন’ হয়েছে দেশ। তালেবানরা এমন দাবি করলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক। তারা ভয়ে স্বপ্নের বাড়িঘর ছেড়ে অন্য দেশের সীমান্তের দিকে পাড়ি জমিয়েছেন। গত কয়েকদিন ধরে সবার দৃষ্টি ছিল কাবুলে হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। এরই মধ্যে হাজার হাজার মানুষ সীমান্তের দিকে যাত্রা করেছেন। তাদের কয়েক হাজার চমন সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানের ভিতরে প্রবেশ করেছেন বলে খবর দিচ্ছে অনলাইন বিবিসি। পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের মধ্যে সবচেয়ে ব্যস্ততম ক্রসিংয়ের অন্যতম চমন স্পাইন বল্ডক সীমান্ত। প্রতিদিন ধুলিমাখা এই শহর দিয়ে দুই দেশের হাজার হাজার ব্যবসায়ী এবং ভ্রমণকারী এক দেশ থেকে আরেক দেশে যান।

কিন্তু তালেবানদের ভয়ে গত কয়েকদিনে সীমান্তের আফগান অংশে কয়েক হাজার মানুষের ঢল নেমেছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা প্রবেশ করছেন পাকিস্তানে। শত শত পুরুষের কাঁধে লাগেজ। বোরকা পরা নারীরা তাদের পিছন পিছন হেঁটে যাচ্ছেন। শিশুরা মায়ের হাত ধরে ঝুলে আছে। তীব্র গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত তাদের। তাদেরই একজন জিরকুন বিবি (ছদ্মনাম)। তিনি হাজারা সম্প্রদায়ের। অতীতে এই গ্রুপটির বিরুদ্ধে নিষ্পেষণ চালিয়েছে তালেবানরা। ফলে এবারও তাদের ভয়। কান্নায় ভেঙে পড়ে জিরকুন বিবি বলেন, বেদনায় আমার হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে। আমার শুধু একটাই জিজ্ঞাসা আমার ছেলের কি হবে। সে আমার একমাত্র ছেলে।
জিরকুন বিবির ছেলে কাজ করতেন একটি বৃটিশ কোম্পানির পক্ষে। তিনি দেশ ছাড়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। দু’তিন বছরের মধ্যে হাজারা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বোমা হামলা করে তালেবানরা। এতে জিরকুন বিবি তার পুত্রবধুকে হারিয়েছেন। জিরকুন বিবি বলেন, তার মৃত্যুতে আমার মনে হলো সবই হারিয়ে ফেলেছি। দীর্ঘদিন ঘুমাতে পারিনি। আমি তালেবানদের নিয়ে খুব ভয়ে আছি।পাকিস্তান পৌঁছার আগে জিরকুন বিবি সীমান্তের কাছে একটি ছোট্ট অস্থায়ী আবাসে অবস্থান করছিলেন। সেখানে আফগানিস্তানের বিভিন্ন অংশ থেকে হাজারা সম্প্রদায়ের নারী ও শিশুরা সমবেত হয়েছেন। দুই মেয়ে এবং নাতনীদের নিয়ে রাজধানী কাবুলের বাড়ি ছেড়ে এসেছেন জিরকুন বিবি। তিনি যখন কথা বলছিলেন, তখন তার কোলের ওপর বসা নাতনী। তাকে দেখে বোঝা যায়, এখন গৃহহারা সে, বিষয়টি বুঝতে পেরেছে। জিরকুন বিবি বলেন, আমার বাড়ি বা বাড়িতে যেসব জিনিস ফেলে এসেছি, তার তোয়াক্কা করি না। আমি শুধু এখন আমার ছেলে ও তার মেয়েকে নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমি এখন কার কাছে যাবো? কি করতে পারি? এই বালিকার মাকে আমি নিজ হাতে কবরে নামিয়েছি। সন্তান লালনপালন করতে প্রচুর ভালবাসা আর কঠোর পরিশ্রম লাগে। আমি আর কাউকে হারাতে চাই না।
শিয়া সম্প্রদায়ের ৬০ বছর বয়সী আফগান নারী জারমিনি বেগম (ছদ্মনাম)। তিনিও অন্য নারীদের একটি গ্রুপের সঙ্গে সবেমাত্র পাকিস্তানে পৌঁছেছেন। অতীতে এ সম্প্রদায়কে টার্গেট করেছে তালেবানরা। তিনি বলেছেন, তার সম্প্রদায়ের লোকেরা যখনই তালেবানের ক্ষমতা দখলের খবর শুনতে পেয়েছে, তখনই তারা বুঝতে পেরেছে আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়া ছাড়া তাদের সামনে কোনো বিকল্প নেই। জারমিনি বেগম বলেন, আমাদের ভয়- তালেবানরা সন্ত্রাসী কর্মকা- শুরু করবে। আমাদের বাড়িঘরে তারা তল্লাশি চালাবে। এরই মধ্যে তারা সরকারি কর্মকর্তাদের খোঁজা শুরু করেছে। যেকোনো দিন বোমা হামলা শুরু হতে পারে।আফগানিস্তান থেকে যেসব মানুষ পাকিস্তানে এসেছেন, তাদের বেশির ভাগই আফগান যুবক, যুবতী। তারা বুঝতে পেরেছেন, তাদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত। এমন একজন মুহাম্মদ আহমের (ছদ্মনাম)। তিনি কাবুলে ইংরেজি ভাষার একজন প্রদর্শক হিসেবে কাজ করছিলেন। এর পাশাপাশি তিনি পড়াশোনা করেন। এত তাড়াতাড়ি কাবুলের পতন হবে, তা তিনি এখনও বিশ্বাস করতে পারেন না। তার ভাষায়- এ এক অবিশ্বাস্য বিষয়। সততার সঙ্গে বলছি, কখনো চিন্তাও করতে পারিনি তারা এক রাতের মধ্যে কাবুলের দখল নিয়ে নেবে। এখন আমার স্কুল এবং নিজের শিক্ষাজীবন নিয়ে ভয়ে আছি। জানি না এরপর কি করতে হবে আমাকে। আমি স্বাধীনতা চাই। নিজের জীবন নিজে বেছে নিতে চাই। ফলে আমি আর ফিরে যাচ্ছি না।
একই রকম অনুভূতি কাবুলের শিক্ষার্থী জামাল খানের (ছদ্মনাম)। তিনি বলেন, সবাই নিজের বাড়িতে বসবাস করতে চায়। কিন্তু আমাদেরকে আফগানিস্তান ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। পাকিস্তান চলে আসায় ভাল মনে হচ্ছে না। অন্য কোনো দেশে যাওয়াও ভাল মনে হচ্ছে না। সব মানুষই উদ্বিগ্ন। কিন্তু তাদের সামনে কোনো আশা নেই।
কান্দাহারের একজন শ্রমিক ওবায়দুল্লাহ (ছদ্মনাম)। সেখানে ব্যবসা বাণিজ্য ধ্বংস হয়ে গেছে বলে পাকিস্তান পালিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। তার কথায়, কোনো সরকার নেই দেশে। আর অর্থনীতি একেবারে তলানিতে। কান্দাহারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। কিন্তু কোথাও কোনো কাজ নেই। তাই পাকিস্তান ছুটে এসেছি, যদি কিছু কাজ পাই। না হয় রিক্সা চালাবো।